আমোল বার্দের ‘আইসোলেশান কক্ষ’ আদতে একটা খড়ের কুঁড়েঘর। তারও আবার দরজাটা ভাঙা। ফুটো ছাদ ছেঁড়া কালো প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা। এবড়োখেবড়ো কাদামাটির মেঝে ভরা পাথর।

কোভিড পজিটিভ হওয়ার পর, মহারাষ্ট্রের শিরুর তালুকের এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে মে মাসের পয়লা তারিখ এই ফাঁকা কুঁড়েঘরে থাকতে শুরু করেছে সে।

মে মাসের প্রচণ্ড গরমে যখন ভেতরে থাকা আর সম্ভব হয় না, তখন কয়েক পা দূরে একটি অশ্বত্থ গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেয় সে। “সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত আমি একটা প্লাস্টিকের মাদুর বিছিয়ে ওই গাছের তলা ঘুমোই,” সে জানায়।

১লা মে ঘুম ভেঙে আমোল দেখে যে তার জ্বর, মাথায় যন্ত্রণা এবং গায়ে ব্যথা। সঙ্গে সঙ্গে শেয়ারের জিপে করে সে পৌঁছে যায় শিরুর গ্রামীণ হাসপাতালে। তাদের ঘর থেকে এই হাসপাতালের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার।

যখন র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষাতে ফল পজিটিভ এলে সে ডাক্তারের কাছে জানতে চায় এর পর তার কী করা উচিত। আমোলের কথায়, “ডাক্তার বললেন, ১০ দিনের ওষুধ কিনে ১৪-১৫ দিনের জন্য বাড়ির লোকজনের থেকে আলাদা থাকতে।”

সে আরও বলল, “বেড ছিল না।” শিরুর গ্রামীণ হাসপাতালে অক্সিজেন পরিষেবা-সহ ২০টি বেড এবং ১০টি আইসোলেশান বেড রয়েছে (মেডিকাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট এই তথ্য দিয়েছেন আমাকে)। কাজেই ডাক্তারের পরামর্শ মতো আমোল হাসপাতালের পাশে একটা ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কেনে। নিজের ছোট্টো ঘরে আইসোলেট করা সম্ভব নয় বলে সে প্রতিবেশীর ফাঁকা কুঁড়েঘরটিতে থাকতে আরম্ভ করে। “ওরা এপ্রিলে কিছুদিন কাজের জন্য বাইরে গেছিল। আমি ওদের ফোন করে বলি আমার কোর্স [কোভিড চিকিৎসা] শেষ না হওয়া পর্যন্ত যেন ওরা আমাকে এখানে থাকতে দেয়,” আমোল জানায়।

With no hospital bed available, Amol Barde isolated himself in this neighbour’s hut with a broken door, damaged roof and stone-strewn floor
PHOTO • Jyoti Shinoli
With no hospital bed available, Amol Barde isolated himself in this neighbour’s hut with a broken door, damaged roof and stone-strewn floor
PHOTO • Jyoti Shinoli

হাসপাতালে বেড না থাকায় আমোল বার্দে প্রতিবেশীর কুঁড়েঘরে একান্তবাস করছিল। সেই ঘরের দরজা আর ছাদ ভাঙা, মেঝেতে পাথর ছড়ানো

শিরুরের গ্রামাঞ্চলে ১১৫টি গ্রামের ৩২১৬৬৪ জন বাসিন্দার জন্য (আদমসুমারি ২০১১), এই তালুকেতে ন’টি সরকারি কোভিড কেয়ার সেন্টারে স্বল্প লক্ষণ রয়েছে এমন রুগীদের জন্য মোট ৯০২টি বেড রয়েছে। গুরুতর আক্রান্তদের জন্য তিনটি কোভিড হাসপাতাল আছে। এই তথ্য জানালেন ডাঃ ডি বি মোরে, পুণে জেলার শিরুরু তালুকের স্বাস্থ্য আধিকারিক। এপ্রিল থেকে মে মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত, জানালেন ডাঃ মোরে, শিরুরের গ্রামাঞ্চলে দিনে ৩০০ থেকে ৪০০টি পজিটিভ কেস ধরা পড়ছিল।

বেডের অভাবে আমোল তার প্রতিবেশীর ঘরে একান্তবাস শুরু করে। তার মা সুনীতা (৩৫), বোন পূজা (১৩) এবং ভাই ভাইয়া (১৫) কাছেই নিজেদের ঘরে থেকে যায়। চৌহানওয়াড়ি গ্রাম থেকে আট কিলোমিটার দূরে তাদের এই কুঁড়েঘরটি ২৫টি ঘর নিয়ে তৈরি হয়া একটি প্রত্যন্ত জনপদের অংশ।

বার্দে পরিবার ভীল পারধি নামের এক আদিবাসী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। যাযাবর পারধি সম্প্রদায়েরি এক গোষ্ঠী এটি। পারধি -সহ অন্যান্য অনেক জনজাতিকে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকার ক্রিমিনাল ট্রাইব্‌স অ্যাক্ট-এর ভিত্তিতে ‘অপরাধী’ বলে দেগে দেয়। ১৯৫২ সালে ভারত সরকার এই আইন বাতিল করে এবং জনজাতিগুলিকে ওই তকমা থেকে বিমুক্ত (ডিনোটিফাই) ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে এই সম্পদায়ের কেউ তফসিলি জাতি, কেউ তফসিলি জনজাতি, কেউ বা অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির তালিকাভুক্ত।

আমোল দশ দিনের যে ওষুধ কিনেছিল তার মধ্যে ছিল প্যারাসিটামল, কাশির সিরাপ এবং মাল্টি-ভিটামিন। সব মিলিয়ে খরচ পড়েছিল প্রায় ২৫০০ টাকা। “আমি ৭০০০ টাকা নিয়ে গেছিলাম,” জানায় সে। খেতের মজুরি থেকে ৫০০০ টাকা বাঁচাতে প্রায় ন মাস সময় লেগেছিল তার। আরও বলল, “আর একদিনে আমি তার অর্ধেকের বেশি খরচ করে ফেললাম।” বাকি ২০০০ টাকা তার মা এক প্রতিবেশীর থেকে ধার করে ছেলেকে দেন হাতে রাখার জন্য।

নিকটবর্তী গ্রামে মাসের ২০ দিন কাজ করে আমোল এবং তার মা সুনীতার মাথা পিছু দৈনিক ১৫০ টাকা আয় হয়। আট বছর আগে সুনীতার স্বামী কৈলাশ তাঁকে এবং সন্তানদের ফেলে চলে গেছেন। সুনীতা বললেন, “ও অন্য কাউকে বিয়ে করেছে।” আমোল এখন কোভিডের জন্য একান্তবাসে থাকায় কাজে না গিয়ে ছেলের দেখভাল করছেন সুনীতা। “আমি ওর ঘরে খাবার আর জল দিয়ে আসি,” বললেন তিনি।

ভীল পারধিদের প্রথা অনুসারে এক বা দুই বছর অন্তর এক জায়গা থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে অন্য জায়গায় চলে যায় এই পরিবার। শিরুরে এই জনপদের একজন সদস্যের কাছেও রেশন কার্ড, ভোটার আইডি বা আধার কার্ড নেই। সরকারি প্রকল্প তাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

Left: The medicines cost Rs. 5,000. It had taken Amol nearly nine months to save Rs. 7,000 from his farm wages. Right: During the day, Amol seeks relief from the heat under a nearby peepal tree
PHOTO • Jyoti Shinoli
Left: The medicines cost Rs. 5,000. It had taken Amol nearly nine months to save Rs. 7,000 from his farm wages. Right: During the day, Amol seeks relief from the heat under a nearby peepal tree
PHOTO • Jyoti Shinoli

বাঁদিকে: ওষুধের দাম ছিল ২৫০০ টাকা। খেতে কাজ করার মজুরি থেকে ৫০০০ টাকা জমাতে আমোলের প্রায় নয় মাস সময় লেগেছিল। ডানদিকে: দিনের বেলায় তাপের হাত থেকে বাঁচার জন্য একটা অশ্বত্থ গাছের নিচে আশ্রয় নেয় আমোল

আমোল ফেরার পর যে ৪৫০০ টাকা বেঁচে ছিল তার থেকে কিছুটা নিয়ে সুনীতা আট কিলোমিটার দূরে একটি মুদির দোকানে যান দিন কুড়ির রেশন কিনতে। আগের মতো আটা আর চাল তো বটেই, কিন্তু সেই সঙ্গে তুর, মুগ ডাল, আর মটকি। “দিনে তিন বেলা অনেক ওষুধ খাচ্ছিল। সঙ্গে শরীরে বল দরকার। নইলে এসব কেনার ক্ষমতা থোড়াই আছে আমাদের,” বললেন সুনীতা। এরপর বললেন, ডাল সবটাই শেষ হয়ে গেছে, চাল কিছুটা পড়ে আছে। “তাই এখন নুন আর লঙ্কা গুঁড়ো দিয়ে চাল ভেজে খাচ্ছি।”

আমোল যখন হোম আইসোলেশান শুরু করে তখন সমস্ত নিয়ম সে জানত না। “আমি শুধু জানতাম মাস্ক পরতে হয়, দূরত্ব বজায় রাখতে হয়, আর ওষুধ খেতে হয়। আর আমি কী করব?” তার প্রশ্ন।

স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের মাইল্ড অথবা এসিম্‌প্টোম্যাটিক রুগীদের ক্ষেত্রে সংশোধিত নির্দেশিকা জানাচ্ছে: “রুগীকে সবসময় তিনটি লেয়ার-যুক্ত মেডিকাল মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ৮ ঘণ্টা ব্যবহারের পর মাস্ক ফেলে দিতে হবে। যদি কোনওভাবে তার আগে নোংরা হয়ে যায় বা ভিজে যায়, তাহলে মাস্ক ফেলে দিতে হবে। যদি রুগীর দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি (কেয়ারগিভার) ঘরে প্রবেশ করেন, তবে রুগী এবং সেই ব্যক্তি উভয়েই এন-৯৫ মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।”

আমোল আর সুনীতা দুজনেই পলিপ্রপিলিন মাস্ক ব্যবহার করেন, এগুলি ধোওয়া যায়। “শিরুর বাজার থেকে ৫০ টাকা দিয়ে জানুয়ারি মাসে এই মাস্কটা কিনেছিলাম আমি,” জানাচ্ছে আমোল। তখন থেকে সেই এই একই মাস্ক ব্যবহার করছে। “একটু ছিঁড়ে গেছে। সারাদিন এটাই পরে থাকি তো। রাত্রিবেলা ধুয়ে নিয়ে আবার সকালে ব্যবহার করি।”

নির্দেশিকাতে “পাল্‌স অক্সিমিটারের সাহায্যে নিজের রক্তে অক্সিজেন স্যাচুরেশান মাপা”র “জোরালো পরামর্শ” দেওয়া হয়েছে। “ওটা আমাদের নেই,” বলল আমোল। “যদি বা থাকত, আমাদের ঘরে কেউ পড়তে-লিখতে জানে না।” পরিবার বছর বছর এক স্থান থেকে অন্যত্র সরে যাওয়ার কারণে সে বা তার ভাই-বোন কেউই স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি।

এখানে ২৫টি ভীল পারধি পরিবারের বসবাস, একেকটি ঘরে সদস্য সংখ্যা আন্দাজ ৪। মে মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত এই জনপদের তিনজন বাসিন্দার করোনা ধরা পড়েছিল। পুণে শহর থেকে এই জনপদের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার। আমোলই ছিল তৃতীয়।

With Amol in 'isolation', his mother Sunita (left) and siblings remained in their own small hut nearby (right)
PHOTO • Jyoti Shinoli
With Amol in 'isolation', his mother Sunita (left) and siblings remained in their own small hut nearby (right)
PHOTO • Jyoti Shinoli

আমোলের ‘আইসোলেশান’ চলাকালীন তাঁর মা সুনীতা (বাঁদিকে) এবং ভাই-বোন কাছাকাছি তাঁদের নিজেদের ছোট্টো কুঁড়েঘরেই থাকছিল (ডানদিকে)

এপ্রিল মাসের ২৯ তারিখ এখানে প্রথম করোনা ধরা পড়ে সন্তোষ ধুলের। তারপরেই ৩০ তারিখ তাঁর স্ত্রী সংগীতার শিরুর গ্রামীণ হাসপাতালে র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করার পর সংক্রমণ ধরা পড়ে। সংগীতা জানালেন, “আমরা দুজনেই কাশছিলাম, জ্বর আর গায়ে ব্যথা ছিল। আমাদেরও বলা হয়েছিল যে বেড নেই।”

বাড়িতে আইসোলেশানই ছিল একমাত্র উপায়। এইসকল ক্ষেত্রে জেলা আধিকারিকদের ভূমিকা সম্পর্কে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে: “হোম আইসোলেশানে আছেন এমন রুগীদের পর্যবেক্ষণ করবেন ফিল্ড কর্মী/ নজরদারী দল। নিজেরা পরিদর্শনে যাবেন। সেই সঙ্গে রোজ রুগীদের খবর নেওয়ার কাজ নিবেদিত একটি কল সেন্টার থাকবে।”

কিন্তু নিকটতম গ্রাম চৌহানওয়াড়ি থেকে এখনও কোনও স্বাস্থ্যকর্মী এই জনপদে আসেননি, জানালেন সন্তোষ। “সেই একবার ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে গ্রাম সেবক আর আশাকর্মীরা এসে করোনার লক্ষণ সম্পর্কে আমাদের সচেতন করে দিয়ে গেছিল।”

কিন্তু স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ডি বি মোরে বলছেন, “আশাকর্মী এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মাধ্যমে আমরা হোম আইসোলেশানে থাকা সমস্ত রুগীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। যদি আমাদের গ্রামের বাইরের দিকে কোনও জনপদের রুগীদের ঠিকমতো খেয়াল না রাখা হয়ে থাকে, সেদিকেও আমরা নজর দেব।”

সংগীতা (২৬) এবং সন্তোষ (২৮) তাঁদের খড়-ছাওয়া ঘরে দু সপ্তাহের বিচ্ছিন্ন-বাস শেষ করেন মে মাসের মাঝামাঝি। এই দম্পতির একটি ১০ বছরের ছেলে এবং ১৩ বছরের মেয়ে আছে। প্রায় নয় কিলোমিটার দূরে নিমোনে গ্রামে জেলা পরিষদ পরিচালিত স্কুলে যেত তারা। এই জনপদে একমাত্র সন্তোষ চতুর্থ শ্রেণি অবধি পড়েছেন। এই ভীল পারধি পরিবারটি যাযাবর হলেও সন্তোষ চেষ্টা করেন যাতে তাঁর ছেলে-মেয়ে স্কুলে পড়তে পারে।

সংগীতা বলছিলেন, “কিন্তু এখন সবকিছু অনলাইন হয়ে গেছে বলে ওদের লেখাপড়া একদম শিকেয় উঠে গেছে।” তিনি এবং সন্তোষ তাঁদের ঘরের সামনে একফালি জমিতে কাঁচা লঙ্কা কিংবা দোদকা (ঝিঙে) চাষ করে। “মাসে একটা তরকারির ২০-২৫ কিলো ফলন হয়,” জানালেন সংগীতা। শিরুরের বাজারে খুচরো ব্যবসায়ীদের কাছে এগুলো বিক্রি করেন তাঁরা। ফলন এবং দামের ওপর নির্ভর করে মাসে রোজগার হয় তিন থেকে চার হাজার টাকা।

তাঁদের ছোট্টো একচিলতে ঘরে চারজন লোক, সেই সঙ্গে মাটির উনুন, জামাকাপড়, বাসনপত্র, বিছানার চাদর, চাষের যন্ত্রপাতি, আর নানান টুকিটাকি – এর মধ্যে দূরত্ববিধি বজায় রাখা অসম্ভব।

'Our settlement doesn’t even have electricity or water', says Santosh; he and Sangeeta were the first to test positive in this Pardhi settlement
PHOTO • Jyoti Shinoli
'Our settlement doesn’t even have electricity or water', says Santosh; he and Sangeeta were the first to test positive in this Pardhi settlement
PHOTO • Jyoti Shinoli

'’ আমাদের গাঁয়ে ইলেক্ট্রিসিটি বা জলের সাপ্লাই নেই’, জানালেন সন্তোষ; এই পারধি জনপদে সন্তোষ এবং সংগীতারই প্রথম কোভিড ধরা পড়ে

মন্ত্রকের নির্দেশিকা বলছে: রুগীকে এমন একটা ঘরে রাখতে হবে যেটা যথেষ্ট খোলামেলা এবং যেখানে বাতাস চলাচল করতে পারে। নির্মল বাতাস যাতে ভেতরে আসতে পারে সেইজন্য জানালা খুলে রাখতে হবে।”

“আমাদের কুঁড়েটা খুবই ছোট্টো, না আছে কোনও জানালা। করোনা ধরা পড়ার পর সবার আগে বাচ্চাদের নিয়ে চিন্তা হল,” বলছেন সংগীতা। ২৮শে এপ্রিল তাঁরা দুই সন্তানকে ওই জনপদেই সন্তোষের ভাইয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

“আমাদের এই গ্রামে ইলেক্ট্রিসিটি বা জলের সাপ্লাই নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়,” বললেন সন্তোষ। নির্দেশিকায় জোর দিয়ে বলা হয়েছে: “অন্তত ৪০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধোবেন। যদি হাতে নোংরা না থাকে, তাহলে অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড রাব ব্যবহার করা যেতে পারে।”

আধ কিলোমিটার দূরে একটি কুয়ো থেকে এই পরিবারকে জল টেনে আনতে হয়। সংগীতার কথায়, “সারাক্ষণই জলের আকাল লেগে থাকে। গরমকাল এলে অবস্থা আরোই খারাপ হয়ে যায়।”

শরীরে মৃদু উপসর্গের জন্য আমোলের মতো সংগীতা এবং সন্তোষকেও ১০ দিনের ওষুধ কিনতে বলা হয়েছিল। এতে বেরিয়ে যায় ১০,০০০ টাকা। সন্তোষ জানালেন, “আমার কাছে মোটে ৪০০০ টাকা ছিল। তাই শিরুরের এক বন্ধু আমাকে ১০০০০ টাকা ধার দেয়, বিপদে আপদে লাগতে পারে বলে আমাকে কিছু বাড়তি টাকাই দিয়েছিল ও।”

২২শে মে পর্যন্ত পুণে জেলায় ৯৯২৬৭১টি কোভিড কেস ধরা পড়েছে (মার্চ ২০২০ থেকে) – এর মধ্যে ২১০০৪৬টি গ্রামাঞ্চলে। মৃতের সংখ্যা ২৭৫৫। জেলা পরিষদের মূখ্য আধিকারিক আয়ুষ প্রসাদ এই পরিসংখ্যান আমাকে দিলেন। “কেস কমছে,” তিনি বললেন। ডাঃ ডি বি মোরেও বলছেন যে শিরুরের গ্রানীণ এলাকাগুলোয় দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা কমছে।

২২শে মে আমোল আমাকে ফোনে বলেছিল, “আমাদের এলাকায় আরেক মহিলার পজিটিভ ধরা পড়েছে।”

তার নিজের দুই সপ্তাহের আইসোলেশানের অবশেষে ইতি। মা এবং ভাই-বোনের কোনও উপসর্গ দেখা দেয়নি। তবুও আমোল প্রতিবেশীর ফাঁকা ঘরেই থাকছে। সে জানায়, “আমি এখন আগের থেকে ভালো আছি বটে, কিন্তু সাবধানের মার নেই। তাই আরও সপ্তাহ দুয়েক আমি এই ঘরেই থাকব।”

সম্পাদকের টিকা: এই লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পর আমোল বার্দে ওষুধ আর বাড়ির খরচ বাবদ কত টাকা ব্যয় করেছে সেই তথ্য পরিবারের কাছ থেকে বিশদে জেনে আমরা বদলে দিয়েছি।

অনুবাদ : সর্বজয়া ভট্টাচার্য

Jyoti Shinoli is a Senior Reporter at the People’s Archive of Rural India; she has previously worked with news channels like ‘Mi Marathi’ and ‘Maharashtra1’.

Other stories by Jyoti Shinoli
Translator : Sarbajaya Bhattacharya
sarbajaya.b@gmail.com

Sarbajaya Bhattacharya is from Kolkata. She is pursuing her Ph.D from Jadavpur University. She is interested in the history of Kolkata and travel literature.

Other stories by Sarbajaya Bhattacharya