কিলোমিটারের পর কিলোমিটার, যতদূর চোখ যায় কাদায় ভরা কাঁচা রাস্তা বই এখানে আর কিছুই নেই। এ রাস্তা দিয়ে সৌরার হাসপাতালে যাওয়াটাই যেন একটা যুদ্ধ। মুবিনা এবং আরশিদ হুসেইন আখূন প্রত্যেক মাসে একবার করে এই যুদ্ধে সামিল হন যখন তাঁরা তাঁদের সন্তান মহসিনের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতে যান। রাখ-এ-আর্থ পুনর্বাসন কলোনির এই যে বরফগলা নর্দমাসম রাস্তা, ন'বছরের ছেলেকে কোলে নিয়ে আরশিদ এটা দিয়েই হাঁটতে থাকেন।

তবে বেশিরভাগ দিনই ২-৩ কিমি হাঁটার পর অটোরিক্সা পাওয়া যায়। ৫০০ টাকা ভাড়া মিটিয়ে ১০ কিমি দূরে উত্তর শ্রীনগরের সৌরাতে শের-ই-কাশ্মীর ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে পৌঁছে যান তাঁরা। অবশ্য কখনও কখনও পুরোটাই হাঁটতে হয় ওঁদের – ঠিক যেমনটা করতে হয়েছিল গতবছর লকডাউনের সময়। "একটা গোটা দিন চলে যায়," মুবিনা জানালেন।

প্রায় ন'বছর হতে চললো মুবিনা ও আরশিদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। ২০১২ সালে সদ্যোজাত মহসিন হঠাৎই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে পড়ে, সেই সঙ্গে জণ্ডিস এবং আকাশছোঁয়া বিলিরুবিনের মাত্রা। ডাক্তারের কাছে ঘনঘন যাতায়াত শুরু হয়। শ্রীনগরে অবস্থিত সরকারি শিশুস্বাস্থ্য সদন জি. বি. পন্থ হাসপাতালে ছোট্ট মহসিন দুই মাস কাটাতে বাধ্য হয়। শেষমেশ জানানো হয় যে তাঁদের সন্তান 'স্বাভাবিক নয়'।

"আমার ছেলের অবস্থার কোনও উন্নতি না হওয়ায় আমরা বেসরকারি একজন ডাক্তারের কাছে যাই, তিনি জানান যে ওর মস্তিষ্কের পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত, ও কোনদিনও হাঁটতে বা উঠে বসতে পারবে না," স্মৃতিচারণ করছিলেন বছর তিরিশের মুবিনা।

দেখা যায় যে ছোট্ট মহসিনের সেরিব্রাল পালসি হয়েছে। সেদিন থেকে আজ অবধি মুবিনার সময়ের সিংহভাগটাই কেটে যায় ছেলের যত্ন নিতে নিতে। "আমি ওর প্রস্রাব পরিষ্কার করি, ওর বিছানা ধুয়ে দিই, জামাকাপড় কেচে দিই, ওকে আদর করে বসাই। ও তো সারাদিন আমার কোলে কোলেই থাকে," বলছিলেন মুবিনা।

'When his condition didn’t improve, we took him to a private doctor who told us that his brain is completely damaged and he will never be able to sit or walk'
PHOTO • Kanika Gupta
'When his condition didn’t improve, we took him to a private doctor who told us that his brain is completely damaged and he will never be able to sit or walk'
PHOTO • Kanika Gupta

'আমার ছেলের অবস্থার কোনও উন্নতি না হওয়ায় আমরা বেসরকারি একজন ডাক্তারের কাছে যাই, তিনি জানান যে ওর মস্তিষ্কের পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত, ও কোনদিনও হাঁটতে বা উঠে বসতে পারবে না'

জনমানবহীন কংক্রিটের খাঁচা, ভেঙে পড়া দেওয়াল, আকাশের দিকে হাঁ করে থাকা ছাদের সারি, এটাই রাখ-এ-আর্থ পুনর্বাসন কলোনির স্বরূপ। ২০১৯ সালে এখানে স্থানান্তরিত হওয়ার পর থেকে আখূন পরিবারের কষ্ট বেড়েই চলেছে।

আগে তাঁরা ডাল হ্রদের মির বেহরি অঞ্চলে থাকতেন। মুবিনা নানারকমের কাজ করতেন ওখানে, রোজগার মোটামুটি ভালোই ছিল তাঁর। "মাসে ১০-১৫ দিন আমি ডালের ধারে ঘাস কাটতাম," বললেন উনি। তারপর এই ঘাস দিয়ে চাটাই বানিয়ে বিক্রি করতেন স্থানীয় বাজারে, এক একটার দাম পেতেন ৫০ টাকা। এছাড়াও মাসে ১৫-২০ দিন হ্রদের জল থেকে শালুক ফুল তুলতেন, প্রতি চার ঘন্টায় ৩০০ টাকা পেতেন এর বিনিময়ে। চাষের মরশুমে মাসে ২০-২৫ দিন আরশিদ কৃষিশ্রমিকের কাজ করে দৈনিক ১,০০০ টাকা পেতেন। এছাড়াও মান্ডিতে সবজি বিক্রি করে প্রতিদিন কম সে কম ৫০০ টাকা তো জুটতোই।

সব মিলিয়ে পরিবারটির রোজগারপাতি ছিল বেশ ভালোই, অবস্থা ছিল সচ্ছল। মহসিনের চিকিৎসার জন্য ডাক্তার-বদ্যি-হাসপাতাল যা কিছু দরকার সবই হাতের নাগালেই ছিল মির বেহরিতে।

"মহসিনের জন্ম হওয়ার পর আমি কাজকর্ম ছেড়ে দিতে বাধ্য হই," বললেন মুবিনা। "ছেলেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে আমি ঘরের কাজে শাশুড়িকে কোনও সাহায্য করতে পারতাম না, এতে তাঁর আপত্তি ছিল ভীষণ। অগত্যা, [মির বেহরির] ওই বাড়িতে আমাদের থাকতে দেওয়ার কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি।"

শেষমেশ তাই মুবিনা আর আরশিদকে বলা হয় তল্পিতল্পা গুটিয়ে বাড়ি ছেড়ে দিতে। কাছেই টিন দিয়ে ছাওয়া একটা ছোট্ট খুপরি বানিয়ে সেখানে উঠে যান তাঁরা। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বন্যার জল এসে তাঁদের এই মাথা গোঁজার এই ঠাঁইটুকুও কেড়ে নেয়। কিছুদিন আত্মীয়দের সঙ্গে থাকার পর আবার উঠে যেতে বাধ্য হন এই দম্পতি – দ্বিতীয়বারের জন্য কোনওমতে আরেকটি ছোট্ট কুঁড়ে বানিয়ে বসবাস শুরু করেন।

তবে হ্যাঁ, মহসিনের দৈনন্দিন চিকিৎসার জন্য যা যা ডাক্তার-বদ্যি, হাসপাতাল, ওষুধপত্র লাগত প্রতিবারই তা হাতের নাগালেই পেতেন তাঁরা।

The family sitting in the sun outside Arshid’s parents’ home in Rakh-e-Arth, Srinagar
PHOTO • Kanika Gupta
The family sitting in the sun outside Arshid’s parents’ home in Rakh-e-Arth, Srinagar
PHOTO • Kanika Gupta

শ্রীনগরের রাখ-এ-আর্থে আরশিদের মা-বাবার বাড়ির ঠিক বাইরেই রোদ পোহাচ্ছে আখূন পরিবার

কাল হল ২০১৭ সালে যখন জম্মু ও কাশ্মীরের জলাশয় ও জলপথ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এলএডাব্লিউডিএ) ডাল হ্রদ সংলগ্ন তল্লাটে একটি পুনর্বাসন প্রকল্প শুরু করে। আরশিদের আব্বজান গুলাম রাসুল ছিলেন আখূন হ্রদের দ্বীপপুঞ্জের একজন কৃষক। আধিকারিকের দল তাঁর কাছে একটি প্রস্তাব নিয়ে যায়। এক লক্ষ টাকা আর ২,০০০ বর্গফুট জমির বিনিময়ে স্থানান্তরিত হতে বলা হয় তাঁকে, আর উনি রাজিও হয়ে যান। ফলে ডাল হ্রদ থেকে ১২ কিমি দূরে বেমিনা অঞ্চলে নবনির্মিত রাখ-এ-আর্থ পুনর্বাসন কলোনিতে বাড়ি বানাবেন বলে উঠে যান ৭০ বছরের গুলাম।

"আব্বু জানান যে তিনি চলে যাচ্ছেন। আমার কাছে দুটো রাস্তা ছিল, এক ওখানেই রয়ে যাওয়া, দুই, আব্বুর সঙ্গে চলে যাওয়া। ততদিনে আমার আরেকটি ওয়ারিশ হয়েছিল আল্লহের দয়ায় – ২০১৪ সালে জন্ম নেয় আলি। আমি রাজি হয়ে যাই আব্বুর সঙ্গে যেতে। [রাখ-এ-আর্থে] তাঁর নতুন বাড়ির পিছনে উনি ছোট্ট একটু জায়গা ছেড়ে দেন যেখানে চারজনের মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই বানাই আমরা," জানালেন আরশিদ।

আখূন পরিবার সেই ১,০০০টির মধ্যে একটি যাদের ২০১৯ সালে সুদূর এমন এক কলোনিতে স্থানান্তরিত করা হয় যেখানে না আছে রাস্তঘাট, না আছে যানবাহন, না আছে কোনও ইস্কুল বা হাসপাতাল। নিদেন পক্ষে খেটে খাওয়ার উপায়টুকুও নেই এখানে। তবে হ্যাঁ, পানীয় জল আর কারেন্টটুকু আছে, ওই যা রক্ষে। "আমরা প্রথম [তিনটির মধ্যে] ধাপে ৪,৬০০টি আবাসন বানিয়েছি। এ পর্যন্ত ২,২৮০টি পরিবারকে বাড়ি বানানোর জন্য জমি দেওয়া হয়েছে," জানালেন এলএডাব্লিউডিএ'র সহ-সভাপতি তুফেইল মাট্টু।

রাখ-এ-আর্থ থেকে ৩ কিমি দূরে একটি চৌক আছে যেখানে প্রতিদিন মজুরেরা জমা হন, দিনমজুরির কাজ খুঁজতে আরশিদও এখানে আসেন। "সকাল ৭টা নাগাদ এখানে অসংখ্য মানুষ ভিড় জমান, দুপুর তক অপেক্ষা করে থাকেন যদি একটা কাজ জুটে যায়। আমি মোটামুটি রোজই ইমারতির কাজের বরাত পেয়ে যাই।" তবে এই ধরনের কাজ মাসে ১২-১৫ দিনের বেশি যেমন জোটেও না, তেমনই দৈনিক ৫০০ টাকার বেশি মজুরিও পাওয়া যায় না। অর্থাৎ ডাল হ্রদে থাকাকালীন তাঁর যা রোজগার ছিল, এখানে তার থেকে অনেকটা কম।

কাজের বরাত নসীবে যখন থাকে না তখন জমানো পুঁজিতে হাত দিতে বাধ্য হন আরশিদ। "কিন্তু টাকাপয়সা যখন একেবারেই থাকে না হাতে তখন মহসিনের চিকিৎসাটুকুও করাতে পারিনা," দুঃখ করছিলেন তিনি।

Rakh-e-Arth has just one sub-health centre that can only handle basic healthcare functions; for emergencies people have to travel to the urban primary health centre at Pantha Chowk, 15 kilometres away. Or, like the Akhoon family, they have to go to the hospital in Soura
PHOTO • Kanika Gupta
Rakh-e-Arth has just one sub-health centre that can only handle basic healthcare functions; for emergencies people have to travel to the urban primary health centre at Pantha Chowk, 15 kilometres away. Or, like the Akhoon family, they have to go to the hospital in Soura
PHOTO • Kanika Gupta

রাখ-এ-আর্থে একটিমাত্র উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে যেখানে প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুই হয়; আপৎকালীন পরিস্থিতিতে মানুষজন ১৫ কিমি দূরে পান্থা চৌকের নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে বাধ্য হন। কিংবা আখূন পরিবারের মতো সৌরার হাসপাতালে যান তাঁরা

রাখ-এ-আর্থে একটিমাত্র উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। শ্রীনগরের বাতামালূ অঞ্চল, অর্থাৎ এই পুনর্বাসন কলোনিটি যেখানে অবস্থিত সেখানকার মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ সামীনা জান বললেন যে এই উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে বাচ্চাদের টিকাকরণ আর প্রসূতিদের দেখভাল বাদে শুধুমাত্র মধুমেহ কিংবা রক্তচাপের মতন অসংক্রামক রোগের চিকিৎসাটুকুই করা হয়।

রাখ-এ-আর্থে একটি হাসপাতাল এবং একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। "ইমারতগুলি বানানো হয়ে গেছে, খুব শীঘ্রই কাজকর্ম শুরু হয়ে যাবে," জানালেন এলএডাব্লিউডিএ'র তুফেইল মাট্টু। "আপাতত উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে একটি ওষুধের দোকান করা চালু হয়েছে। একজন ডাক্তার প্রতিদিন আসছেন কয়েক ঘন্টার জন্য।" সুতরাং আপৎকালীন পরিস্থিতিতে মানুষজন ১৫ কিমি দূরে পান্থা চৌকের নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে বাধ্য হন। কিংবা আখূন পরিবারের মতো সৌরার হাসপাতালে যান তাঁরা।

মুবিনার মাঝে মধ্যেই বুক ধড়ফড় করে, এই কলোনিতে আসার পর থেকে তাঁর নিজের স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি ঘটেছে। "আমার খোকার অবস্থা ভালো নয়, তাই আমাকে হাজার একটা মুশকিলের মোকাবিলা করতে হয়। খোকার হাত, পা, মগজ, কিছুই কাজ করে না। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি ও আমার কোলেই বসে থাকে। রাত্রি হলেই সারা শরীর জুড়ে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয় আমার। খোকার দেখভাল করতে করতে আমি নিজেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছি, সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা হয় ওর জন্য। ডাক্তারের কাছে গেলেই তাঁরা বলেন চিকিৎসা করাতে, একের পর এক পরীক্ষা করাতে, এতকিছুর পয়সা কোথায় পাই বলুন তো? আমি নিজে তো আর দশটা টাকাও রোজগার করতে পারি না," বলছিলেন উনি।

ছোট্ট মহসিনকে প্রতি ১০ দিনে ৭০০ টাকার ওষুধ খেতে হয়। ঘুসঘুসে জ্বর, আলসার আর সারাগায়ে ঘায়ের জন্য প্রায় প্রত্যেক মাসেই হাসপাতালে ছুটতে হয়। হ্যাঁ, এটা ঠিকই যে জম্মু ও কাশ্মীরের বিল্ডিং ও অন্যান্য ইমারতি মজদুরদের উন্নয়ন সমিতির দ্বারা প্রদত্ত মজদুর কার্ড অনুযায়ী আরশিদ এবং তাঁর পরিবারের সবার বছরে ১ লাখ টাকা অবধির চিকিৎসা বিনামূল্যে পাওয়ার কথা, কিন্তু এই কার্ড চালু রাখতে প্রতিবছর অল্প কিছু টাকা যেমন দিতে হয় তেমনই একটি শংসাপত্রও লাগে যেখানে বলা থাকবে যে সত্ত্বাধিকারী ৯০ দিন একটানা কাজ করেছেন। এটা আরশিদ এখনও অবধি করে উঠতে সক্ষম হননি।

Left: Younger son Ali says, 'My father doesn’t have money, how can I go to school?' Right: The family's tin home behind Arshid's father’s house
PHOTO • Kanika Gupta
Left: Younger son Ali says, 'My father doesn’t have money, how can I go to school?' Right: The family's tin home behind Arshid's father’s house
PHOTO • Kanika Gupta

বাঁদিকে: ছোটছেলে আলি বলছে, 'আমার আব্বু বড্ড গরিব তো, আমায় ইস্কুলে দাখিল করবে কী করে?' ডানদিকে: আরশিদের আব্বাজানের বাড়ির পিছনে স্থিত আখূন পরিবারের ছোট্ট টিনের খুপরি

"মোহসিনের পক্ষে হাঁটাচলা করা, ইস্কুলে যাওয়া, খেলাধূলা করা, কিংবা অন্যান্য সাধারণ বাচ্চরা যা যা পারে তার কোনকিছুই করা সম্ভব নয়," জানালেন জি. বি. পন্থ হাসপাতালের ডাঃ মুদাসির রাঠের। বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ রোখার প্রচেষ্টা, স্পাস্টিসিটির জন্য ফিজিওথেরাপি এবং হাতেপায়ে খিঁচুনি কিংবা অনুরূপ কিছু অসুখবিসুখের জন্য চিকিৎসা করা ছাড়া ডাক্তারদের আর কিছুই করার নেই। "সেরিব্রাল পালসি একটি স্নায়বিক রোগ, একে সারিয়ে তোলার কোনও পথ্য ডাক্তারিশাস্ত্রের কাছে নেই," বোঝাচ্ছিলেন শ্রীনগরের সরকারি মেডিক্যাল কলেজের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ আসিয়া আঞ্জুম। "নবজাতকের যদি জণ্ডিস হয়, আর সেটার যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে এমনটা হতে পারে। ফলত মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, চলাফেরা করাটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়, স্পাস্টিসিটি দেখা যায় এবং বৌদ্ধিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।"

দুটো পয়সা রোজগার করার নিরন্তর প্রচেষ্টা, এ ডাক্তার থেকে সে ডাক্তারের দরজায় হত্যে দিয়ে বেড়ানো আর দুই ছেলের দেখভাল, এই করেই দিন কেটে যাচ্ছে মুবিনা এবং আরশিদের। ছোট ছেলে আলির বয়স মোটামুটি ৭ বছর, সে আমার কাছে নালিশ জানালো, "আম্মি আমায় একটুও ভালোবাসে না। সারাক্ষণ ভাইয়াকে কোলে নিয়ে বসে থাকে, কই, আমায় তো একবারও আদর করে না?" নিজের দাদার সঙ্গে শত চেষ্টা সত্ত্বেও মিল খাওয়াতে পারে না ছোট্ট আলি – "ভাইয়াজান আমার সঙ্গে মোটেই খেলা করে না, কথাও বলে না। আমি ছোট তো! কী করে সাহায্য করবো বলো?"

ইস্কুলে যাওয়াটাও নসীবে জোটে না আলির। "আমার আব্বু বড্ড গরিব তো, আমায় ইস্কুলে দাখিল করবে কী করে?" জিজ্ঞাসা করছিল ছোট্ট আলি। তাছাড়া রাখ-এ-আর্থে কোনও ইস্কুলই তো নেই। একখানা বানানোর কথা দিয়েছিল বটে এলএডাব্লিউডিএ, কিন্তু সেটা বাস্তবায়িত হয়নি আজ অবধি। কাছাকাছি সরকারি ইস্কুল বলতে সেই বেমিনায় একটা আছে বটে, তবে সেটা দুই কিমি দূরে আর কেবলমাত্র মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের জন্য।

"রাখ-এ-আর্থে আসার ছয় মাসের মধ্যে আমরা বুঝতে পারি যে এখানে টিকে থাকা অসম্ভব," বলছিলেন মুবিনা, "খুবই বেহুদা অবস্থা, মোহসিনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো গাড়িঘোড়াও পাওয়া যায় না। আর হাতে যখন টাকাপয়সা থাকে না [সেটার জন্য], তখন প্রচণ্ড অসুবিধার মুখে পড়ি আমরা।"

"কোনও রোজগারপাতি নেই এখানে," জানালেন আরশিদ, "আমরা কী করবো বলুন তো? আমি আপ্রাণ চেষ্টা করব একটা কাজ জোটানোর, কিংবা টাকা ধার করব। অন্য কোনও উপায়ও তো নেই।"

অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)

Kanika Gupta

Kanika Gupta is a freelance journalist and photographer from New Delhi.

Other stories by Kanika Gupta
Translator : Joshua Bodhinetra
bodhinetra@gmail.com

Joshua Bodhinetra has an MPhil in Comparative Literature from Jadavpur University, Kolkata. He is a translator for PARI, and a poet, art-writer, art-critic and social activist.

Other stories by Joshua Bodhinetra