এ যেন ১৯৯৮ সালের সেই জনপ্রিয় ফিল্ম অ বাগস্‌ লাইফ - এর পরের কিস্তি। হলিউডের সেই ফিল্মে লুটপাটে সিদ্ধহস্ত দুর্বৃত্ত ফড়িংদের হাত থেকে পিপীলিকা দ্বীপের অধিবাসী হাজার হাজার স্বজনের প্রাণ রক্ষার্থে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ফ্লিক নামের পিঁপড়েটি নিজের বেরাদরির সাহসী যোদ্ধাদের একত্রিত করছিল।

কিন্তু ভারতবর্ষের বাস্তব জীবনে সিনেমাটির যে পর্ব উদ্ঘাটিত হচ্ছে তাতে কোটি কোটি চরিত্র, তাদের মধ্যে মানুষের সংখ্যা ১.৩ বিলিয়ন [১৩০ কোটি]। এই বছর মে মাসে ঝাঁকে ঝাঁকে যে ছোটো শুঁড়ওয়ালা দস্যু ফড়িং অর্থাৎ পঙ্গপালের দল হাজির হয়েছিল, তাদের এক একটি ঝাঁকেই থাকে লক্ষ লক্ষ পঙ্গপাল। তারা বিহার, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশের প্রায় ২.৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে তাণ্ডব চালিয়ে সব ফসল ধ্বংস করে দিয়েছে বলে জানালেন দেশের কৃষি কমিশনার।

এই উড়ুক্কু দুর্বৃত্তকূল দেশের সীমা মানে না। রাষ্ট্রসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংগঠন (এফএও) বলছে আফ্রিকা থে্কে ভারতবর্ষের মধ্যে ৩০টি দেশে অর্থাৎ, ১৬০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে পঙ্গপালের নিবাস। ৩৫,০০০ মানুষ, ২০টি উট অথবা ছয়টি হাতি মিলে যতটা খেতে পারে, একদিনে সেই পরিমাণ ফসল সাবাড় করে দিতে পারে একটি ছোটো পঙ্গপালের ঝাঁক -  এই ‘ছোটো’ ঝাঁকে ১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে থাকে প্রায় ৪০ মিলিয়ন [অর্থাৎ চার কোটি] পঙ্গপাল!

স্বাভাবিকভাবেই প্রতিরক্ষা, কৃষি, গৃহ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অসামরিক বিমান পরিষেবা ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক ইত্যাদি নানান বিভাগ থেকে সদস্যদের নিয়ে তৈরি হয় জাতীয় পঙ্গপাল সতর্কীকরণ সংস্থা।

কয়েক লক্ষ পোকামাকড়ের অস্তিত্বের ভারসাম্য নষ্টের এই কাহিনিচিত্রে অবশ্য পঙ্গপাল একমাত্র খলনায়ক নয়। পতঙ্গবিজ্ঞানী, আদিবাসী তথা অন্যান্য কৃষকেরা এই পটভূমিকায় দস্যু হিসাবে চিহ্নিত করেছেন আরও বহু প্রজাতিকে, যাদের মধ্যে আছে বাইরে থেকে এসে হানা দেওয়া কিছু প্রজাতিও। আর যারা ভালো বলে চিহ্নিত, অর্থাৎ খাদ্য উৎপাদনে সহায়ক ‘উপকারী কীটপতঙ্গ’—তারাও কিন্তু বখে যেতে পারে যদি জলবায়ু নিজের খামখেয়ালিপনায় তাদের আবাসস্থলে থাবা বসায়।

Even the gentle Red-Breasted Jezebel butterflies (left) are creating a flutter as they float from the eastern to the western Himalayas, staking new territorial claims and unseating 'good guy' native species, while the 'bad guys' like the Schistocerca gregaria locust (right) proliferate too. (Photos taken in Rajasthan, May 2020)
PHOTO • Courtesy: Butterfly Research Centre, Bhimtal, Uttarakhand
Even the gentle Red-Breasted Jezebel butterflies (left) are creating a flutter as they float from the eastern to the western Himalayas, staking new territorial claims and unseating 'good guy' native species, while the 'bad guys' like the Schistocerca gregaria locust (right) proliferate too. (Photos taken in Rajasthan, May 2020)
PHOTO • Rajender Nagar

এমনকি লাল বুকের সুবোধ জেজেবেল প্রজাপতিও (বাঁদিকে) পূর্ব থেকে পশ্চিম হিমালয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ে নতুন নতুন স্থান দখল করে স্থানীয় প্রজাতির অধিবাসীদের তাড়িয়ে দিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, আবার স্কিস্টোসেরিয়া গ্রেগারিয়া পঙ্গপালের (ডাইনে) মতো হানাদার প্রজাতিও নিজেদের ঘাঁটি গড়ছে। (চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে ২০২০ সালের মে মাসে, রাজস্থানে)

এক ডজন প্রজাতির পিঁপড়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, বিশ্রী শব্দ করে উচ্চিংড়েরা নতুন নতুন জায়গা দখল করে নিচ্ছে আর ক্ষুরধার মুখের ঘুণ পোকারা অন্ধকার জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে তাজা তাজা কাঠ খেয়ে ফেলছে, মৌমাছির সংখ্যা কমে যাচ্ছে আর গঙ্গাফড়িং অসময়ে এসে হাজির হচ্ছে, আর এতে করে সমস্ত প্রাণীর খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এমনকি লাল বুকের সুবোধ জেজেবেল প্রজাপতিও (বাঁদিকে) পূর্ব থেকে পশ্চিম হিমালয়ে অভূতপূর্ব আকার গঠন করে উড়ে যাওয়ার সময়ে স্থানীয় প্রজাতির অধিবাসীদের উৎখাত করে নতুন নতুন স্থান কব্জা করে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ভারতজোড়া এই যুদ্ধক্ষেত্র, আর দস্যকূলও সর্বত্র বিরাজমান।

স্থানীয় কীটপতঙ্গ কমে যাওয়ার কারণে নিদারুণ ক্ষতির মুখে পড়েছেন মধু সংগ্রাহকের দল। “একসময়ে আমরা পাহাড়ের খাড়াইয়ের গায়ে শয়ে শয়ে মৌমাছির চাক দেখতে পেতাম। আজ সে সব খুঁজে পাওয়াই কঠিন,” বললেন মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়া জেলার ভারিয়া আদিবাসী গোষ্ঠীর ৪০ বছর বয়সী বৃজ কিষণ ভারতী।

বৃজ কিষণ এবং তাঁর মতো দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী মধু সংগ্রাহকেরা নিজেদের এলাকার কাছাকাছি খাড়াই বেয়ে ওঠেন মধু পাড়তে, সেই মধু তাঁরা ২০ কিলোমিটার দূরের তামিয়া ব্লকের প্রশাসনিক কেন্দ্রের সাপ্তাহিক হাটে বিক্রি করেন। বছরে দুটি অভিযান চালান তাঁরা — মরসুমে একটি করে (নভেম্বর-ডিসেম্বর ও মে-জুন) এবং এই কাজে বহু দিন বাইরে বাইরেই কাটান তাঁরা।

দশ বছরে তাঁদের মধুর দাম ৬০ টাকা থেকে বেড়ে কিলো প্রতি হয়েছে ৪০০ টাকা কিন্তু বৃজ কিষণের ভাই জয় কিষণ, ৩৫, জানালেন, “আগে এমন অভিযানে বেরিয়ে আমরা জনপ্রতি ২৫-৩০ কুইন্টাল মধু পেতাম আর এখন কোনোরকমে ১০ কিলো পেলেই বর্তে যাই। জঙ্গলে জাম, বয়রা, আম, শালের মতো গাছের সংখ্যা কমে গেছে। আর গাছ কমে যাওয়া মানেই ফুলও কমে যাওয়া আর ফুলের অমিল মানেই মৌমাছি আর অন্যান্য কীটপতঙ্গদের খাদ্যের ঘাটতি।” ফলে স্বাভাবিকভাবেই মউলিদের আয় যাচ্ছে কমে।

Top row: 'Today, bee hives are difficult to find', say honey-hunters Brij Kishan Bharti (left) and Jai Kishan Bharti (right). Bottom left: 'We are seeing  new pests', says Lotan Rajbhopa. Bottom right: 'When bees are less, flowers and fruit will also be less', says Ranjit Singh
PHOTO • Priti David

উপরের সারি: ‘আজকাল মৌচাক পাওয়াটাই কঠিন’, বললেন মধুসংগ্রাহক বৃজ কিষণ ভারতী (বাঁদিকে) ও জয় কিষণ ভারতী (ডানদিকে)। নিচের সারির বাঁদিকে: ‘আমরা নতুন নতুন কীটপতঙ্গ দেখছি আজকাল,’ বললেন লোটান রাজভোপা। নিচের সারির ডানদিকে: ‘মৌমাছি কম থাকলে ফুল-ফলও কম হবে,’ বললেন রঞ্জিত সিং

ফুলের সংখ্যা কমে যাওয়াই চিন্তার একমাত্র বিষয় নয়। “আমরা জলবায়ুর বিবর্তন ঘটিত এমন সব প্রাকৃতিক পরিবর্তন লক্ষ্য করছি যার মধ্যে কোনও সামঞ্জস্যই নেই — কীটপতঙ্গের আবির্ভাব আর ফুল ফোটার মধ্যে ছন্দপতন ঘটে যাচ্ছে,” বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত জাতীয় জীববিজ্ঞান কেন্দ্রের ডঃ জয়শ্রী রত্নম বললেন। “নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে নির্দিষ্ট সময়ের আগে বসন্তকালের আগমন হেতু বহু গাছের ফুল ফোটার সময়ে এগিয়ে এসেছে কিন্তু পরাগামিলনের সময় তো আর সেই নিরিখে সবসময়ে এগোয়নি,” জাতীয় জীববিজ্ঞান কেন্দ্রের বন্যপ্রাণ জীববিদ্যা তথা সংরক্ষণ প্রকল্পের সহযোগী পরিচালক ডঃ রত্নম জানালেন। সোজা কথায় এর অর্থ, নিজেদের প্রয়োজনের সময়ে কীটপতঙ্গের খাদ্য অমিল। এই পরিবর্তনগুলি সবই জলবায়ুর বিবর্তনজনিত।”

ডঃ রত্নম আরও বললেন যে প্রকৃতির এই পরিবর্তনগুলি আমাদের খাদ্যনিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে, অথচ “লোমশ চারপেয়েদের প্রতি মানুষ যতটা স্নেহশীল, কীটপতঙ্গের ভাগে তা জোটে না।”

*****

“আমার যে শুধু পেয়ারা গাছেই ফলন কম হয়েছে তা নয়, আমলকি আর মহুয়া গাছেরও একই হাল। আজ বহু বছর হয়ে গেল আচার (চিরঞ্জী/পিয়াল) গাছে আর ফল আসছে না,” বললেন মধ্যপ্রদেশের হোসেঙ্গাবাদ জেলার কতিয়াদানা জনপদের ৫২ বছর বয়সী রঞ্জিত সিং মর্শকোলে। গোণ্ড আদিবাসী সমাজের এই কৃষক পিপারিয়া তেহসিলে নিজেদের নয় একর পারিবারিক জমিতে চানা চাষ করেন।

“মৌমাছি কমে গেলে ফুল আর ফল তো কম হবেই,” বললেন রঞ্জিত সিং।

আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা পিঁপড়ে, মৌমাছি, মাছি, মথ, প্রজাপতি, গুবরে পোকা, বোলতার মতো স্থানীয় কীটপতঙ্গের ডানা, শুঁড়, দাঁড়া ও পায়ের উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল কারণ পরাগমিলনের প্রক্রিয়ায় এরা সহায়কের ভূমিকা নেয়। এফএও বুলেটিনে বলা হয়েছে যে বিশ্বব্যাপী ২০,০০০ প্রজাতির বুনো মৌমাছি ছাড়াও আছে আরও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বাদুর ও অন্যান্য প্রাণী, যারা পরাগমিলনে সাহায্য করে। ৭৫ শতাংশ খাদ্যশস্য ও ৯০ শতাংশ বুনো গাছপালা এই পরগায়নের উপর নির্ভরশীল। সারা বিশ্বে প্রায় ২৩৫ থেকে ৫৭৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের শস্য এই প্রক্রিয়ার দ্বারা প্রভাবিত হয়।

আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা পিঁপড়ে, মৌমাছি, মাছি, মথ, প্রজাপতি, গুবরে পোকা, বোলতার মতো স্থানীয় কীটপতঙ্গের ডানা, শুঁড়, দাঁড়া ও পায়ের উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল

‘যাবতীয় গাছপালা বেড়ে ওঠার জন্য’ পোকামাকড়ের উপর নির্ভর করে

খাদ্যশস্যের পরাগায়ন ঘটানো ছাড়াও কীটপতঙ্গ, গাছ ও গাছের কঙ্কালকে ভেঙে দিয়ে, মাটি ওলটপালট করে, আর বীজ ছড়িয়ে জঙ্গলের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়কের ভূমিকা পালন করে থাকে। ভারতবর্ষের কয়েক লক্ষ আদিবাসী ও অন্যান্য মানুষ জঙ্গলের কাছাকাছি এলাকা জুড়ে থাকা ১৭০,০০০ গ্রামে বসবাস করেন, সেখান থকে জ্বালানি কাঠ ও কাঠ ব্যতিরেকে অন্যান্য বিক্রয়যোগ্য বনজ সম্পদ সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাছাড়াও দেশের ৫৩৬ মিলিয়ন গবাদি পশুও জঙ্গলের উপর নির্ভরশীল।

“জঙ্গল মরে যাচ্ছে,” গাছের ছায়ায় বসে বললেন বিজয় সিং। আশপাশে তাঁর মোষগুলি তখন চরছিল। পিপারিয়া তেহসিলে এই গোণ্ড আদিবাসী সমাজের কৃষকের ৩০ একর জমি আছে, এই জমিতে একসময়ে তিনি চানা আর গম চাষ করতেন। কিছুদিন হল তিনি জমিটিতে আবাদ না করে ফেলে রেখেছেন। “মুষলধারে এক দুই পশলা বৃষ্টি হয় আর দ্রুত সরে যায় অথবা এতটাই কম বৃষ্টি পড়ে যে মাটিটুকুও ভেজে না।” এই খামখেয়ালিপনায় কীটপতঙ্গের কোন কোন সমস্যা হয় সেটা তিনি খেয়াল করেছেন। “জল না থাকলে পিঁপড়েগুলো কোথায় বাসা বানাবে, বলুন তো?”

পিপারিয়া তেহসিলের পাঁচমারি ক্যান্টনমেন্ট অঞ্চলে ৪৫ বছর বয়সী নান্দুলাল ধুর্বে আমাদের একটি এককেন্দ্রিক (concentric) উঁচু গোলাকার বামি (পিঁপড়ের বাসা আর উঁইয়ের ঢিবি উভয়েরই স্থানীয় নাম) দেখিয়ে বললেন “বামি তৈরি করতে নরম মাটি আর ভেজা আবহাওয়া লাগে। কিন্তু আমরা লাগাতার বৃষ্টি তো আর পাই-ই না, ফলে গরমই বেশি থাকে আর এগুলি দেখাই যায় না।”

“আজকাল এই অসময়ের বর্ষা ও শীত দুটিই খুব বেশি বা খুব কম, আর এই কারণে ফুল শুকিয়ে ঝরে যায়,” বললেন, এই অঞ্চলের বাস্তুবিদ্যায় অগাধ জ্ঞান সম্পন্ন, ৪৫ বছর বয়সী গোণ্ড আদিবাসী উদ্যানপালক ধুর্বে। “এতে করে ফল কম হচ্ছে আর তাই পোকামাকড়ের খাদ্যও কমে যাচ্ছে।”

PHOTO • Priti David

বাঁদিকে: নন্দুলাল ধুর্বে বললেন, ‘বামি বা পিঁপড়ের বাসা (মাঝে, মধ্যপ্রদেশের জুন্নরদেও তেহসিলে) গরম শুষ্ক জলবায়ুর কারণে এখন খুব কমই দেখা যায়।’ ‘জঙ্গল মরে যাচ্ছে,’ বলছিলেন মধ্যপ্রদেশের পিপারিয়া তেহসিলের বিজয় সিং

১,১০০ মিটার উচ্চতায়, সাতপুরা পর্বতমালায় অবস্থিত, পাঁচমারি জাতীয় উদ্যান ও ব্যাঘ্র অভয়ারণ্য নিয়ে ইউনেস্কোর জীবমণ্ডল সংচিতি (Unesco biosphere reserve with national parks and tiger sanctuaries)। সমতলের উষ্ণ আবহাওয়ার হাত থেকে নিস্তার পেতে মধ্য ভারতের এই পার্বত্য অঞ্চলে সারাবছরই মানুষের ভিড় লেগে থাকে। ধুর্বে এবং বিজয় সিং বলছিলেন যে এখানেও তাপমাত্রা ঊর্ধ্বমুখী — এবং তাঁদের কথার সমর্থনে তথ্যপ্রমাণও মিলে গেল।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের বিশ্ব উষ্ণায়ন বিষয়ক ইন্টারঅ্যাক্টিভ পোর্টাল থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে ১৯৬০ সালে পিপারিয়াতে বছরে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সম্বলিত দিনের সংখ্যা ছিল ১৫৭ আর এখন এমন দিনের সংখ্যা বছরে ২০১ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কৃষক এবং বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করছেন যে এর ফলে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী কমে যাচ্ছে ও বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অন্য একটি এফএও রিপোর্ট সাবধানবাণী শোনাচ্ছে —“মানুষের হস্তক্ষেপের ফলে এখন বিভিন্ন জীব প্রজাতির বিলুপ্তি বর্তমানে স্বাভাবিকের তুলনায় ১০০ থেকে ১,০০০ গুণ অধিক হয়েছে।”

*****

“আজ তো বেচার মতো পিঁপড়ে আমার কাছে মোটেই নেই,” ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুর জেলার ছোটেদোঙ্গারের সাপ্তাহিক হাটে আমাদের জানালেন গোণ্ড আদিবাসী সম্প্রদায়ের মুন্নিবাঈ কচলন। ৫০ বছর বয়সী মুন্নি ছোটবেলা থেকেই বস্তারের জঙ্গলে ঘাস ও পিঁপড়ে সংগ্রহ করছেন। বিধবা এই মহিলা নিজের চার মেয়েকে নিয়ে নয় কিমি দূরে রোহতাদ গ্রামে থাকেন। দুই একর জমিতে যেটুকু শস্য চাষ করেন, তা তাঁদের খোরাকি হিসেবেই ব্যবহার হয়।

অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জন্য যে নগদ অর্থ লাগে সেই খরচ বাবদ ৫০-৬০ টাকা তিনি বাজার থেকে তোলার চেষ্টা করেন – বাজারে তিনি ঝাঁটা তৈরির ঘাস, পিঁপড়ে, আর মাঝেসাঝে অল্প কয়েক কিলো চাল বিক্রি করেন। যে স্বল্প পরিমাণ পিঁপড়ে তিনি বিক্রি করেন তার থেকে বড়ো জোর ২০ টাকা হাতে আসে বলে তিনি জানালেন। কিন্তু আমাদের সঙ্গে যেদিন তাঁর দেখা হয়েছিল, সেদিন তাঁর কাছে বিক্রি করার মতো পিঁপড়ে ছিল না, ছিল কেবল এক গোছা ঘাস।

Top left: The apis cerana indica or the 'bee', resting on the oleander plant. Top right: Oecophylla smaragdina, the weaver ant, making a nest using silk produced by its young one. Bottom left: Daphnis nerii, the hawk moth, emerges at night and helps in pollination. Bottom right: Just before the rains, the winged form female termite emerges and leaves the the colony to form a new colony. The small ones are the infertile soldiers who break down organic matter like dead trees. These termites are also food for some human communities who eat it for the high protein content
PHOTO • Yeshwanth H M ,  Abin Ghosh

উপরের সারি, বাঁদিকে: ওলিয়েন্ডার গাছের উপর বিশ্রামরত অ্যাপিস সেরিনা ইণ্ডিকা বা মৌমাছি। উপরে ডানদিকে: ওয়েকোফিলা স্মারাগডিনা বা তাঁতি পিঁপড়ে তার শাবকের তৈরি পশম দিয়ে বাসা বুনছে। নিচের সারি, বাঁদিকে: ড্যাফনিস নেরি বা হক মথ রাতে বের হয় পোকা ধরতে, এরা পরাগমিলনে সাহায্য করে। নিচে ডানদিকে: বর্ষার ঠিক আগে স্ত্রী উঁইপোকা হাজির হয়ে পুরানো দল ছেড়ে নতুন দল তৈরি করতে চলে যায়। ছোটগুলি বংশবৃদ্ধিতে অক্ষম সৈনিক, এরা জৈবিক পদার্থ যেমন মৃত গাছপালা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। উঁইপোকা কিছু কিছু মনুষ্য সমাজে খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হত — এদের শরীরে থাকা উচ্চমাত্রায় প্রোটিনের জন্য তাঁরা এই পোকাকে খাদ্যতালিকায় রাখেন

“আমরা হালাইঙ্গি (লাল পিঁপড়ে) খাই,” বললেন মুন্নি। “একসময়ে মহিলারা সহজেই জঙ্গল থেকে এগুলি সংগ্রহ করত। এখন এসব খুবই কম পাওয়া যায়, আর যেটুকু মেলে তাও আবার উঁচু গাছের উপরে — ফলে সংগ্রহ করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের ভয় হয় যে পিঁপড়ে সংগ্রহ করতে গিয়ে আমাদের পুরুষরা আঘাত না পায়।”

ভারতে কীটপতঙ্গের অন্তিম লগ্ন উপস্থিত হয়েছে। “জীব প্রজাতির টিকে থাকার জন্য কীতপতঙ্গ অতি জরুরি। এদের বিলুপ্তি ঘটলে পুরো তন্ত্রটাই ধ্বসে পড়বে,” বললেন এনসিবিএস-এর সহযোগী অধ্যাপক ডঃ সঞ্জয় সানে। তিনি মধ্যপ্রদেশের পাঁচমারি ও কর্ণাটকের আগুম্বেতে দুটি হক মথ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করেন। “গাছপালার ধরনে, চাষবাসের পদ্ধতিতে ও তাপমাত্রায় পরিবর্তনের কারণে প্রায় সব প্রজাতির কীটপতঙ্গই কমে যাচ্ছে। গোটা গোটা প্রজাতি এক এক করে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।”

“কীটপতঙ্গ তাপমাত্রার খুব বেশি হেরফের সহ্য করতে পারে না,” বললেন, জুলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার পরিচালক, ডঃ কৈলাস চন্দ্র। তাপমাত্রা মাত্র ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লেও ওদের বাস্তুতন্ত্র সম্পূর্ণ বদলে যেতে পারে চিরকালের জন্য।” বিগত তিন বছরে, পতঙ্গবিজ্ঞানীরা গুবরে পোকা, যাকে ইন্টার্ন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসারভেশন অফ নেচার প্রজাপতি ও গঙ্গা ফড়িংয়ের সঙ্গেই বিপন্ন প্রজাতি হিসাবে চিহ্নিত করে লাল তালিকাভুক্ত করেছে, তাতে ৭০ শতাংশ ঘাটতি লক্ষ্য করেছেন। “কীটনাশকের বহুল ব্যবহার আমাদের জল জমিতে ছড়িয়ে গিয়ে স্থানীয় কীটপতঙ্গ, জলজ পতঙ্গ, ও বিরল প্রজাতির কীটপতঙ্গ বিনষ্ট করে আমাদের জীববৈচিত্রকে একেবারে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে।”

মধ্যপ্রদেশের তামিয়া তেহসিলের ঘটিয়া জনপদের মাওয়াসি সম্প্রদায়ের আদিবাসী কৃষক লোটন রাজভোপা আমাদের বলেছিলেন, “পুরানো কীটপতঙ্গের আর দেখা পাই না, বরং তার বদলে দেখি কিছু কিছু নতুন কীটপতঙ্গ। এমন বিপুল সংখ্যায় এরা আসে যে সব ফসল নষ্ট করে দিতে পারে। আমরা ওদের নাম দিয়েছি ‘ভিন-ভিনি’ (মানে অসংখ্য),” অসহায় স্বরে তিনি বললেন। “এরা এমনই ভয়ানক বিদঘুটে কীটনাশকেও মরে না, বরং এতে তাদের সংখ্যা বেড়ে যায়।”

Ant hills in the Satpura tiger reserve of MP. 'Deforestation and fragmentation coupled with climate change are leading to disturbed habitats', says Dr. Himender Bharti, India’s ‘Ant Man’
PHOTO • Priti David
Ant hills in the Satpura tiger reserve of MP. 'Deforestation and fragmentation coupled with climate change are leading to disturbed habitats', says Dr. Himender Bharti, India’s ‘Ant Man’
PHOTO • Priti David

মধ্যপ্রদেশের সাতপুরার ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রে উঁইয়ের ঢিবি। ‘বনধ্বংস ও জঙ্গল ভেঙে টুকরো করার সঙ্গে জলবায়ুর বিবর্তন হাত ধরাধরি করে এদের ঠাঁই কেড়ে নিচ্ছে,’ জানালেন ভারতের ‘পিঁপড়ে মানুষ’ (অ্যান্ট ম্যান) হিসাবে পরিচিত হিমেন্দর ভারতী

উত্তরাখণ্ড রাজ্যের ভিমতাল অঞ্চলে প্রজাপতি গবেষণা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ৫৫ বছর বয়সী স্মেটাসেক বহুদিন ধরেই বলছেন যে হিমালয় অঞ্চলের উপর বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবের ফলে এই পর্বতমালার পশ্চিমদিকের পরিবেশ আর্দ্রতর ও উষ্ণতর হয়ে উঠছে। ফলে যে শীতকাল আগে শীতল ও শুষ্ক হত তা এখন হয়ে উঠেছে আর্দ্রতর ও উষ্ণতর এবং সেই কারণেই পূর্ব হিমালয়ের যে সব প্রজাপতি এমন আবহাওয়ায় অভ্যস্ত তারা গিয়ে ঘাঁটি তৈরি করছে পশ্চিমে।

ভারতবর্ষ জীববৈচিত্রের এক অন্যতম প্রধান কেন্দ্র কারণ পৃথিবীর ২.৪ শতাংশ ভূখণ্ড ভারতের অন্তর্গত হলেও দুনিয়ার জীবপ্রজাতির ৭ থেকে ৮ শতাংশের বাস এখানেই। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর অবধি ভারতে ৬৫,৪৬৬ প্রজাতির কীটপতঙ্গের খোঁজ পাওয়া গেছে,” বললেন জুলজিকাল সার্ভে অভ ইন্ডিয়ার ডঃ চন্দ্র। অবশ্য, “এটি হিসাব খানিক কমিয়েই বলা, আসলে হয়তো আছে এর থেকেও ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি। কিন্তু বহু প্রজাতিই হয়তো খোঁজ মেলার আগেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।”

*****

“অরণ্য ধ্বংস ও জঙ্গল ভেঙে টুকরো করার সঙ্গে জলবায়ুর বিবর্তন হাত ধরাধরি করে এদের ঠাঁই কেড়ে নিচ্ছে,” জানালেন পাতিয়ালার পঞ্জাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনমূলক জীবিবিজ্ঞানী তথা ভারতের ‘পিঁপড়ে মানুষ’ (অ্যান্ট ম্যান) হিসাবে পরিচিত হিমেন্দর ভারতী। “অন্যান্য মেরুদণ্ডবিশিষ্ট প্রাণীর তুলনায় পিঁপড়েদের ঘাত সহনশীলতা বহুগুণ কম আর সেজন্যই ভূভাগের বা জীববৈচিত্রের বৈকল্য আন্দাজ করার জন্য পিঁপড়েদের উপর নজর রাখা হয়।”

ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিদ্যা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ডঃ ভারতী ভারতের ৮২৮টি বৈধ প্রজাতি ও উপ-প্রজাতির পিঁপড়ের তালিকা প্রথম প্রস্তুত করার কৃতিত্বের দাবিদার। হামলাকারী প্রজাতি পরিবেশের সঙ্গে অনেক দ্রুত ভালো মানিয়ে নিচ্ছে এবং দেশজ প্রজাতিগুলিকে স্থানচ্যূত করছে। এরা কিন্তু শেষাবধি স্থান দখল করে নেবে,” তিনি সাবধান বাণী শোনালেন।

Top left: 'I don’t have any ants to sell today', says Munnibai Kachlan (top left) at the Chhotedongar weekly haat. Top right: 'Last year, these phundi keeda ate up most of my paddy crop', says Parvati Bai of Pagara village. Bottom left: Kanchi Koil in the Niligirs talks about the fireflies of her childhood. Bottom right: Vishal Ram Markham, a buffalo herder in Chhattisgarh, says; 'he land and the jungle now belong to man'
PHOTO • Priti David

উপরে বাঁদিকে: ‘বেচার মতো পিঁপড়ে আজ আমার কাছে মোটেই নেই,’ ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুর জেলার ছোটেদোঙ্গারর সাপ্তাহিক হাটে মুন্নিবাই কচলন জানালেন। উপরে ডানদিকে: ‘গতবছর এই ফুণ্ডি পোকা আমার বেশিরভাগ ধান খেয়ে গেছিল,’ বললেন পগারা গ্রামের পার্বতী বাই। নিচে বাঁদিকে: নীলগিরির কাঞ্চি কয়েল তাঁর ছোটবেলার জোনাকির কথা বলছিলেন। নিচে ডানদিকে: ছত্তিশগড়ের এক মোষপালক বিশাল রাম মরকাম জানালেন, ‘এখানকার জমি জঙ্গল এখন সব মানুষের দখলে’

মাওয়াসি আদিবাসী সম্প্রদায়ের, ৫০ বছর বয়সী পার্বতী মনে করেন দস্যুরাই এখন জিতে চলেছে। তিনি বললেন, হোসেঙ্গাবাদ জেলায় তাঁর নিজের গ্রাম পগারায়, “এই ফুণ্ডি পোকা দেখা দিয়েছে (খুব ছোটো সূক্ষ্ম এক ধরনের পোকা)। গতবছর আমার এক একর জমির ধান প্রায় সবটাই এরা সাবাড় করে দিয়েছিল।” তাঁর আন্দাজ, এই ক্ষতির পরিমাণ ওই এক মরসুমেই ছিল ৯,০০০ টাকা।

পার্বতী বাইয়ের গ্রাম থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে, দক্ষিণের নীলগিরির বাসিন্দা উদ্ভিদবিজ্ঞানী, ডঃ অনিতা ভার্গিসের পর্যবেক্ষণ, “স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মানুষ পরিবর্তনগুলি সর্বাগ্রে লক্ষ্য করেন।” নীলগিরির কীস্টোন ফাউণ্ডেশনের এই সহপরিচালক জানালেন, “কেরালার মধু সংগ্রহকারীরা প্রথম লক্ষ্য করেন যে অ্যাপিস সেরানা প্রজাতির মৌমাছি এখন বেশিরভাগ সময়ে জমির কাছে বাসা না বানিয়ে বানাচ্ছে গাছের কোটরে এবং তাঁরা মনে করেন যে ভাল্লুকের হানা আর জমির বেড়ে চলা তাপমাত্রাই এর কারণ। চিরাচরিত জ্ঞানের অধিকারী জনগোষ্ঠী ও বিজ্ঞানীদের পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা চালাবার একটা পথ খোঁজা দরকার।”

নীলগিরিরই, কাট্টুনায়াকন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ, ৬২ বছর বয়সী কাঞ্চি কয়েল সানন্দে নিজের ছোটবেলার জোনাকি পোকার (কোলেওপ্টেরা) গল্প শোনালেন - কেমন এই প্রাণীর দল তাঁর ছোটবেলার রাতগুলি আলো করে থাকত। “এই মিনমিনি পুচিগুলিকে (জোনাকির ঝাঁক) গাছের উপর রথের মতো দেখতে লাগে। আমার ছোটবেলায় ওরা ঝাঁক বেঁধে আসত আর গাছগুলি ভীষণ সুন্দর দেখাত। এখন আর ওদের তেমন দেখতে পাই না।”

আর ছত্তিশগড়ের ধামতারি জেলার জবর্রা জঙ্গলে বছর ৫০ বয়সের গোণ্ড কৃষক বিশাল রাম মরকাম আফসোসের সঙ্গে জানালেন জঙ্গল হারিয়ে যাওয়ার কথা —“জমি আর জঙ্গল এখন মানুষের দখলে। আমরা আগুন জ্বালাই, জলে আর জমিতে ডিএপি (ডায়ামোনিয়াম ফসফেট) ছড়াই আর। আমার পোষ্য বড়ো জন্তুর পাল থেকে প্রতি বছর ৭ থেকে ১০টি মারা যায় জল দূষণের কারণে। মাছ আর পাখিই টিকতে পারে না তো পোকামাকড় টিকবে কেমন করে?”

কভারচিত্র: যশবন্ত এইচ.এম.

প্রতিবেদক মহম্মদ আরিফ খান, রাজেন্দ্র কুমার মহাবীর, অনুপ প্রকাশ, ডাঃ সবিতা চিব এবং ভরত মেরুগুকে এই প্রতিবেদন লেখার কাজে অমূল্য সাহায্য এবং সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানাতে চান। ফরেনসিক কীটতত্ত্ববিদ ডঃ মীনাক্ষী ভারতীকেও সহৃদয় ধন্যবাদ তার অন্তর্দৃষ্টি ভাগ করে নেওয়ার জন্য।

পারি-র জলবায়ু বিবর্তনের উপর দেশব্যাপী রিপোর্টিং সংক্রান্ত প্রকল্পটি ইউএনডিপি সমর্থিত একটি যৌথ উদ্যোগের অংশ যার লক্ষ্য জলবায়ুর বিবর্তনের প্রকৃত চিত্রটি দেশের সাধারণ মানুষের স্বর এবং অভিজ্ঞতায় বিবৃত করা।

নিবন্ধটি পুনঃপ্রকাশ করতে চাইলে zahra@ruralindiaonline.org – এই ইমেল আইডিতে লিখুন এবং সঙ্গে সিসি করুন namita@ruralindiaonline.org – এই আইডিতে।

অনুবাদ: চিলকা

Priti David

Priti David is the Executive Editor of PARI. A journalist and teacher, she also heads the Education section of PARI and works with schools and colleges to bring rural issues into the classroom and curriculum, and with young people to document the issues of our times.

Other stories by Priti David
Translator : Chilka
chilkak9@gmail.com

Chilka is an associate professor in History at Basanti Devi College, Kolkata, West Bengal; her area of focus is visual mass media and gender.

Other stories by Chilka