মঙ্গলা বানসোডে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলেন, “মানুষের রুচি এখন অনেক বদলে গেছে, আমরা অবশ্য বদলাই নি।” তাঁর বক্তব্য, দর্শকরা এখন জনপ্রিয় হিন্দি গান শুনতে চায়। তিনি হাসতে হাসতে বলেন, “শেষে এমন দিন আসবে, যখন মঞ্চে শিবাজী মহারাজ প্রবেশ করলেও জনপ্রিয় [বলিউড] গান ব্যবহার করতে হবে!”

মঙ্গলাতাই যে শুধুমাত্র দর্শকদের রুচিতেই বদল হতে দেখেছেন তা নয়, বিগত অর্ধ-শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে তামাশা – এই শিল্প আঙ্গিকটাতেই সামগ্রিকভাবে রদবদল হয়েছে। জনা দশেক নারী ও পুরুষদের দল নিয়ে, গরুর গাড়িতে ভ্রাম্যমাণ ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলি বর্তমানে বিশালাকার প্রযোজনায় পরিণত হয়েছে, তাঁর নিজের দলটাই এইরকম বৃহৎ প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত।

৬৬ বছর বয়সী মঙ্গলা বানসোডে, তাঁর সাত বছর বয়স থেকেই এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। মঙ্গলাতাই তামাশা শিল্পের কিংবদন্তী শিল্পী, পুণে জেলার নারায়ণগাঁও নিবাসী ভিঠাবাঈ নারায়ণগাঁওকারের জ্যেষ্ঠা কন্যা, এই নারায়ণগাঁওকে তামাশা শিল্পের প্রাণকেন্দ্র বলে গণ্য করা হত। ১৯৯৩ সাল থেকে সাতারা জেলার কারাভাদি গ্রামের নিবাসী মঙ্গলাতাই প্রায় ১৭০ জনকে নিয়ে  নিজস্ব একটি ফড (ট্রুপ বা দল) চালান। ‘মঙ্গলা বানসোডে এবং নীতীন কুমার তামাশা মণ্ডল' (নীতীন কুমার তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র, তিনি এই তামাশা দলের গায়ক-অভিনেতা-নর্তক এবং  তারকা শিল্পী) প্রতিবছর সেপ্টেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের গ্রামগুলিতে তামাশা প্রদর্শন করে। (দেখুন ‘তামাশার কারাগারে আমিচিরদিন বন্দি থাকতে চাই’’ ।)
Mangala Bansode and her younger son Nitin Kumar perform a duet during the performance in Gogolwadi village, Pune district
PHOTO • Shatakshi Gawade
A photo of tamasha empress Vithabai Narayangaonkar, Mangala Bansode’s mother, hangs in Mangala tai’s house in Karawdi village, Karad taluka, Satara district
PHOTO • Shatakshi Gawade

বাঁদিকে: মঙ্গলা বানসোডে এবং তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র নীতীন কুমার , পুণে জেলার গোগলওয়াড়িতে তামাশা প্রদর্শন করছেন। ডানদিকে : মঙ্গলাতাইয়ের মা এবং বিখ্যাত তামাশা শিল্পী , ভিঠাবাঈ নারায়ণগাঁওকারের ফটোগ্রাফ তার কন্যার ঘরে টাঙানো রয়েছে

প্রতিটি গ্রামে মঙ্গলাতাইয়ের তামাশার দলের শ্রমিকদের নির্মিত মঞ্চে দলের শিল্পীরা তামাশা প্রদর্শন করেন। প্রবেশমূল্য দিয়ে বা টিকিট কেটে এ ধরনের অনুষ্ঠান করা হলে তা সাধারণত তাঁবু খাটিয়ে তার নিচে করা হয় এবং গ্রামের যাত্রা (মেলা) কমিটির থেকে অনুষ্ঠানের বন্দোবস্ত করা হলে তা সাধারণত মুক্তাঙ্গনে টিকিট ছাড়াই হয়। টিকিটের বিনিময়ে অনুষ্ঠান হলে তাতে ১,০০০ – ২,০০০ দর্শক হয় এবং টিকিট ছাড়া মেলা কমিটির সঙ্গে চুক্তি করে ‘ সুপারি ’ অনুষ্ঠান হলে দর্শকদের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০,০০০ – ১৫,০০০।

১৯৭০ সালের ১ টাকা প্রবেশমূল্য এখন বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা, কিন্তু, তামাশা দলগুলির মালিকরা বলছেন, এই ব্যবসায় মুনাফা ক্রমাগত কমছে। দলের কর্মচারীদের বেতন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং ট্রাক, বাস, আলো ও অন্যান্য সরঞ্জাম বাবদ ভ্রাম্যমাণ এই দলের উৎপাদন খরচও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে, মঙ্গলাতাইয়ের কথা মতো, দর্শকদের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। এর অন্যতম একটি কারণ বিনোদন জগতে প্রযুক্তিগত বিবর্তন। অনেকেই এখন টেলিভিশন বা মোবাইল ফোনে সিনেমা দেখছেন। নারায়ণগাঁওয়ে, প্রতিবছর এপ্রিল মাসে যাত্রা চলাকালীন অনুষ্ঠানগুলি একটি স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়। মঙ্গলাতাই প্রশ্ন করেন, “তাহলে আর কেনই বা কেউ কষ্ট করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে টানা তিন ঘন্টা ধরে তামাশা দেখতে যাবে?”

১৯৭০ সালের ১ টাকা প্রবেশমূল্য এখন বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা, কিন্তু, তামাশা দলগুলির মালিকরা বলছেন, এই ব্যবসায় মুনাফা ক্রমাগত কমছে। দলের কর্মচারীদের বেতন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং উৎপাদন খরচও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভিডিও দেখুন: প্রারম্ভিক বন্দনা বা প্রার্থনা , নৃত্য পরিবেশন এবং লোক নাটকের অভিনয় – এই সবই তামাশা আঙ্গিকটির অংশ

গ্রামাঞ্চলের বিনোদনের জগতে তামাশার মতো প্রদর্শন শিল্পের স্থান ক্রমাগত সঙ্কুচিত হচ্ছে। অতীতে, বিভিন্ন গ্রামে যাওয়ার পথে, বানসোডের দল ধুলে, জলগাঁও, নাসিক, সাতারা, সাঙ্গলী, কোলহাপুর, সোলাপুর, পারভানি, নন্দেদ, ওসমানাবাদ ও বীডসহ মহারাষ্ট্রের সমস্ত বড় বড় শহরগুলিতে অনুষ্ঠান করত। এমনকি পুণে শহরেও এই দল অনুষ্ঠান করেছে। এখন এসব কদাচিৎ ঘটে, অথবা প্রায় ঘটে না বলা চলে। “আগে আমরা জেলা [জেলা সদরপ্তর] শহরে তামাশা দেখিয়েছি; এখন আমরা কেবল এই তালুক থেকে সেই তালুকে ছুটে চলি,” বলেন মঙ্গলাতাইয়ের বড় ছেলে এবং এই ফড -এর ম্যানেজার অনিল বানসোডে।

১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত, এই শিল্পের স্বর্ণযুগে, মুম্বই শহরেও তামাশা পরিবেশিত হত; দলগুলি শহরের উপকণ্ঠে ঘুরে ঘুরে সেপ্টেম্বর থেকে মে মাস - তামাশা প্রদর্শনের এই মরশুমে বহু অনুষ্ঠানের আয়োজন করত। বিখ্যাত তামশা শিল্পী তথা তামাশা দলের কর্ণধার রঘুবীর খেদকর জানান, প্রায় দুই দশক আগে মুম্বইয়ে তাঁর দল শেষবারের মতো অনুষ্ঠান করেছিল। তিনি বলেন, শহর থেকে তামাশা শিল্প বিদায় নেওয়ার পেছনে, কাপড়ের মিলগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়া অন্যতম একটি কারণ ছিল, তামাশার মারাঠিভাষী দর্শক, যাঁরা পেশায় মূলতঃ ছিলেন এইসব কাপড়ের কলের শ্রমিক, তাঁরা শহর থেকে চলে যান কাপড়ের মিলগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায়। ৫৬ বছর বয়সী খেদকর রত্নাগিরি জেলার খেদ তালুকের চিঞ্চঘর গ্রামের অধিবাসী; ১৯৭০ সালে মাত্র নয় বছর বয়সে তিনি মঞ্চে কাজ করতে শুরু করেন। ১৯৬৯ সালে তাঁর মা কান্তাবাঈ তাঁর দল, ‘রঘুবীর খেদকর সাহ কান্তাবাঈ সাতারকার লোকনাট্য তামাশা মণ্ডল’-এর সূচনা করেন।

Male artists dressed as women during the performance in Gogolwadi village, Pune district
PHOTO • Shatakshi Gawade
Male artists take position for the gan during the performance in Gogolwadi village, Pune district
PHOTO • Shatakshi Gawade

পুরুষ শিল্পীরা তামাশায় বিভিন্ন ভূমিকায় অভিনয় করেন , এমনকি নারী চরিত্রেও অভিনয় করেন কেউ কেউ (বাঁদিকে) , তাঁরা গণ বা প্রারম্ভিক প্রার্থনা গীতি পরিবেশন করেন (ডানদিকে)

দলের মালিকরা জানান, সরকারি নির্দেশের কারণেও তামাশা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। “অতীতে, আমাদের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পর [প্রায় রাত ১১টা নাগাদ শুরু হয় এবং] ভোর ৬টা পর্যন্ত চলত, এই পুরোটা সময় মানুষ মনোযোগ সহকারে আমাদের অনুষ্ঠান দেখতেন,” একথা আমাদের জানান অনিল বানসোডে। শব্দ দূষণ সংক্রান্ত নিয়মের (২০০০ সালের শব্দ দূষণ আইন ও নিয়ন্ত্রণ বিধি, থেকে শুরু করে) নিগড়ে আটকে তামাশা গ্রামীণ এলাকায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বর্তমান নিয়ম অনুসারে, এখন রাত ১০টার পর তামাশা দলগুলির অনুষ্ঠান আইনত নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে, এমনকি শহরের উপকণ্ঠেও একই নিয়ম বহাল আছে। এই সরকারি বিধিনিষেধ তামাশা আঙ্গিকটির কাঠামোগত পরিবর্তন সূচিত করেছে, দল মালিকরা এখন অনুষ্ঠানের সময়কে কাটছাঁট করার জন্য তামাশার অনেক উপাদান সংক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছেন।

খেদকরের কথায়, “বর্তমানে এইসব অনুষ্ঠান পরিবেশন করার জায়গাটা ভীষণরকমের সঙ্কুচিত হয়ে এসেছে। এর সঙ্গে এটাও সত্যি যে, বড় বড় সাউন্ড সিস্টেম দিয়ে তামাশায় আজকাল এত জগঝম্প হচ্ছে, সেটাও একটা বিরক্তিকর ব্যাপার। আগের মত সুন্দর সুস্থ নেই আর। তামাশা বড় বড় স্পিকার সিস্টেমে জোরে জোরে চিৎকারে এসে ঠেকেছে। বিগত ২০ বছর ধরে এইভাবে চলছে। অথচ পূর্বে ৩,০০০ দর্শকের জন্য কয়েকটি মাত্র ভেরীর ব্যবস্থা থাকত। এখনকার মত, আগের দর্শক কোলাহলমুখর, হল্লাবাজ এবং উচ্ছৃঙ্খল ছিল না, ধীর স্থির হয়ে বসে তারা অনুষ্ঠান দেখত।”

A short skit on Shivaji is performed during the performance in Savlaj village, Sangli district
PHOTO • Shatakshi Gawade
Nitin Kumar, Mangala tai’s younger son, as Bhagat Singh during a dance-drama sequence in the performance in Gogolwadi village, Pune district
PHOTO • Shatakshi Gawade

বাঁদিকে: সাঙ্গলী জেলার সভলজ গ্রামে তামাশা অভিনেতারা শিবাজী মহারাজের জীবনের উপর ভিত্তি করে একটি ব্যঙ্গনাটিকা পরিবেশন করছেন ডানদিকে: নীতীন কুমার গোগালওয়াডি গ্রামে ভগত সিংয়ের ভূমিকায় অভিনয় করছেন

কিন্তু, তামশার সম্ভবত সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটি এসেছে তার বয়ান এবং পরিবেশনা বা প্রদর্শনরীতিতে। তামাশার পরম্পরাগত সাধারণ উপাদানগুলি হল গণ (দেবতা গণেশের উদ্দেশ্যে নিবেদিত এক প্রারম্ভিক প্রার্থনা বা বন্দনা), গভলন (কৃষ্ণ ও গোপীদের মধ্যে আলাপের উপর ভিত্তি করে নৃত্য), বটভানি (একটি হাস্যরসাত্মক রঙ্গ নাটিকা), রঙ্গবাজী (এক ধরনের নৃত্যধারা), এবং ভাগ নাট্য (লোকনাটক, সাধারণত সামাজিক বিষয় অথবা পৌরাণিক কাহিনি নির্ভর নাটক)। যদিও এই উপাদান এবং তামাশার পরিবশনে এই উপাদানগুলির পর্যায় ক্রম বজায় থাকলেও, পরম্পরাগতভাবে চলে আসা এই শিল্প এবং সঙ্গীত পরিবেশনার সঙ্গে যুক্ত নানান বিধি, আচার (উদাহরণস্বরূপ, তাল বা মন্দিরা, টুনটুনা, ঢোলকি এবং হালগির মতো সংগীত যন্ত্রগুলি এখনও গণের সাথে সঙ্গত করা হয়) অক্ষুন্ন থাকলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশনার পদ্ধতিতে আমুল বদল এসেছে। তামাশা সব মিলিয়ে ‘বিচিত্র বিনোদন’ গোছের নৃত্য-নাট্য প্যাকেজের একটি বিচিত্রানুষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।

পুণে নিবাসী চিত্রসাংবাদিক সন্দেশ ভান্ডারে তামাশা সম্প্রদায়ের উপর একটি বই লিখেছেন; তাঁর মতে, “তামাশার দলগুলি মদ্যপান-সমস্যা, পণপ্রথা ইত্যাদি সামাজিক বিষয় ঘিরে ভাগ নাট্য পরিবেশন বন্ধ করে দিয়ে সেই স্থানে দর্শকদের দাবিতে হিন্দি এবং মারাঠি গান নির্ভর রঙ্গবাজী কে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।” ভান্ডারে প্রায় দশ বছর আগে কোঙ্কন, মারাঠওয়াড়া ও বিদর্ভের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে তামাশার ছবি তোলেন, এই বছর তিনি আবার উক্ত অঞ্চলগুলিতে ফিরে যান তামাশা আঙ্গিকের পরিবর্তনগুলি পর্যবেক্ষণ করার জন্য।

ভিডিও দেখুন : ৬৬ বছর বয়সী মঙ্গলা বানসোডে , সেই সময়ের কথা স্মরণ করেন যখন তাঁরা মাত্র দুটি বাল্ব জ্বেলে মঞ্চে আলোর ব্যবস্থা করতেন

“এখন আমরা গ্রামীণ এলাকায় তামাশা পরিবেশন করতে গেলে আমাদের অনুষ্ঠানে সিনেমার গান অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। তখন ভাগ নাট্য পর্যায়টি আমাদের বাদ দিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।” খেদকরও একই কথা বলেন, “যেসব দর্শকরা ভাগ নাট্য উপভোগ করত, তারা আর আজকাল তামাশা দেখতে আসে না। আগের তুলনায় আমাদের প্রায় শতকরা ২৫ - ৫০ শতাংশ দর্শক এখন কমে গেছে।”

তিনি সেই সময়ের কথা স্মরণ করেন, যখন দর্শকরা তামাশাকে এক প্রকৃত শিল্প রীতি বলে মান্য করতেন। খেদকরের ভাষায়, “যখন আমি আমার নিজের ফড শুরু করি, তখন আমাদের এই শিল্পের গুণগত মান ছিল অনেক উন্নত, এবং আমাদের প্রতিভা প্রমাণ করার সুযোগ আমরা তখন পেয়েছিলাম। তামাশার কিছু অংশ ছিল তাৎক্ষণিক, বাকি অংশটি আগে থেকেই প্রস্তুত করা থাকত। পরিবেশনার সময় কুশীলব নিজের মতো করে গড়েপিঠে নিতে পারতেন তাঁর ভূমিকা বা অবস্থাটি। এটা বেশ মজার ব্যাপার ছিল।” খেদকর তামাশায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং নৃত্য ব্যবহার করতেন, এছাড়া ঠুমরি, গজল ও কাওয়ালী ইত্যাদিও রাখতেন। আজকাল আর এইসব পরিবেশন করা হয় না।

বিনোদনের ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি দর্শকদের তামাশা থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে দেখে, খেদকর নিজের প্রযোজনাকে ‘আধুনিক’ করে তোলার প্রয়াস করেন। “আমরা কাল্পনিক বয়ান বা গল্প অবলম্বনে, ধর্ম, রাজকাহিনি ইত্যাদি বিষয় নির্ভর নাটক নির্মাণ করতাম। পরবর্তীতে, আমরা সংবাদপত্রে প্রকাশিত ডাকাত বা রবিন-হুড জাতীয় চরিত্র অথবা পণপ্রথা বা মহিলাদের প্রতি হিংসা ইত্যাদি লিঙ্গ সম্পর্কিত বিষয়গুলির মতো ‘সত্য ঘটনা’ অবলম্বনে তামাশা পরিবেশন করতে শুরু করি।”
The audience in Gogolwadi village, Pune district
PHOTO • Shatakshi Gawade

কম পক্ষে ১,০০০ দর্শক তামাশা অনুষ্ঠান দেখতে আসেন , এবং বিশেষ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে দর্শক সংখ্যা ১০,০০০ – ১৫,০০০ পর্যন্ত যেতে পারে

খেদকরের দলটি ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম (যেমন ড্রাম, তাল বাদ্যের যন্ত্র, এবং ডিজিটাল অর্গ্যান), আলো, অভিনব শৌখিন পোশাকআশাক, এবং রূপসজ্জার নানান কায়দা ইত্যাদি তামাশার পরিবেশনার মধ্যে নিয়ে এসেছে। তিনি অনুধাবন করেছিলেন যে, যুব সম্প্রদায় তামাশা থেকে দূরে সরে গেছে, তখনও পরম্পরাগত নভ-ভারি (নয়-গজ) শাড়ি পরিহিত মহিলারা তামাশায় অভিনয় করতেন। তিনি জানান, “যুব সম্প্রদায়ের মনোরঞ্জন করতে পারবে এমন গান আমরা পরিবেশন করতে শুরু করলাম।” (দর্শকদের অধিকাংশই পুরুষ; অল্পসংখ্যক মহিলারা মাঝে মাঝে তামাশা দেখতে আসেন, সাধারণত পিছনের সারিতে বসে তাঁরা অনুষ্ঠান দেখেন।) “তামাশা বিনোদনের মাধ্যম, পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। চলচ্চিত্র শিল্পের ক্ষেত্রে যেমন পরিবর্তন আসে, ঠিক তেমন তামাশার ক্ষেত্রেও বদল অনিবার্য,” খেদকর বলেন।

তাঁর আনা এই পরিবর্তনগুলি তামাশার অন্যান্য দলগুলিও অনুকরণ করতে শুরু করে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই বদলগুলি তামাশা শিল্পের জন্য ধ্বংসাত্মক প্রমাণিত হয়েছিল। যদিও খেদকরের বিশ্বাস যে এই পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী ছিল, তিনি মনে করেন, “অতীতে দর্শকরা আপাদমস্তক কাপড়ে আচ্ছাদিত মহিলা শিল্পীদের মঞ্চে দেখতে ভালোবাসত, সেই জায়গায় এখন মহিলাদের চটুল, খোলামেলা পোশাক পরিধান করে মঞ্চে নামতে হয়। এইসব বন্ধ হওয়া দরকার। এখন আর দর্শকদের উপর আমার কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই, আমার সময় এখন ফুরিয়েছে। যে নতুন প্রজন্মের হাতে এখন তামাশার রাশ, তাদেরই সংশোধনের দায়িত্ব বহন করতে হবে। বর্তমানে তামাশা শিল্প ঘোর বিপদের মধ্যে রয়েছে।”

আর তাই, আজও যখন মঙ্গলাতাই মঞ্চে শিল্প পরিবেশন করেন, তাঁর নিষ্ঠা, বিশ্বাসসহ নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে উত্সর্গ করে দেন এই শিল্পে; আর্ক লাইটের আলো, ঝলমলে পোশাক এবং রূপ সজ্জা, আবেগঘন অভিব্যক্তি বুঝতে দেয় না যে বয়সের ভারে ন্যূব্জ হাঁটুদুটি এখন আর আগের মত কসরৎ করে মঞ্চময় ছুটে বেড়াতে পারে না। কিছুতেই মনে হয় না যে তাঁর বয়স এখন ৬৬ পেরিয়েছে, বিশ্বাস করতে মন চায় না যে তামাশা শিল্পের হাতে গোণা শেষ কয়েকজন কিংবদন্তি শিল্পীর মধ্যে তিনি অন্যতম।

বাংলা অনুবাদ: স্মিতা খাটোর

Shatakshi Gawade and Vinaya Kurtkoti
Translator : Smita Khator
smita.khator@gmail.com

Smita Khator, originally from Murshidabad district of West Bengal, is now based in Kolkata, and is Translations Editor at the People’s Archive of Rural India, as well as a Bengali translator.

Other stories by Smita Khator