যেদিন আমার এসএসসি [সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট] পরীক্ষার ফলাফল বেরোনোর কথা, সেদিন আমার হাল ছিল ঠিক ক্রিকেট বল ব্যাটে লাগার পরবর্তী অবস্থার মতো। সবার চোখ ওই বলের উপর স্থির, চার রান হবে নাকি ছয়? আর যদি ব্যর্থ হই? বাবা তো সঙ্গে সঙ্গে আমার বিয়ে দিয়ে দেবেন।
২০২০ সালের ২৯শে জুলাই ফলাফল ঘোষণা হয়। আমি ৭৯.০৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হই। মাত্র এক নম্বরের জন্য আমার স্কুলে আমি তৃতীয় স্থান অর্জন করতে পারিনি। আমাদের নাথযোগী যাযাবর সম্প্রদায়ের কোনও মেয়েই এর আগে পর্যন্ত দশম শ্রেণি পেরোয়নি। আমার সম্প্রদায়ের আরও তিনজন মেয়ে এবছর এই পরীক্ষায় সফল হয়েছে।
আমি নাভ খুর্দ [জলগাঁও জামোদ তহসিল, বুলডানা জেলা] নামে একটি ছোটো গ্রামে থাকি, এখানে শুধু আমাদের সম্প্রদায়ের লোকজনই বাস করে। ভিক্ষাজীবীর কাজ করার জন্য এখানকার বেশিরভাগ মানুষ পুণে, মুম্বই এবং নাগপুরে যায়। আর আমার বাবা-মায়ের মতো বাকি অধিবাসীরা গ্রামের আশেপাশে দিনমজুরের কাজ করেন।
আমার বাবা, ৪৫ বছর বয়সী ভৌলাল সাহেবরাও সোলাঙ্কে এবং মা, ৩০ বছর বয়সী দ্রৌপদা সোলাঙ্কে, গম, জোয়ার, ভুট্টা, সয়াবিন এবং কাপাস চাষের জমিতে খেতমজুরি করেন। দিনে প্রায় আট ঘণ্টা কাজ করে তাঁরা জন প্রতি ২০০ টাকা করে পান। একমাসে ১০-১২ দিনের বেশি কাজ পান তাঁরা পান না,এর কারণ আরও অনেক লোক কাজ খুঁজছে, আর কাজের ভীষণ অভাব।
আমার বাবা স্কুলে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন এবং তারপরে কাজে লাগতে হল বলে বাবা পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। আমার দুই দিদি রয়েছে – রুকমার বয়স ২৪ বছর। সে কখনও স্কুলে যায়নি এবং আরেক দিদি ২২ বছর বয়সী নীনা। এই দিদি ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। দুজনেই এখন বিবাহিত এবং স্কুল ছাড়ার পর থেকেই তারা দিনমজুরি করে চলেছে। আমার দাদা দেবলাল, ওর বয়স ২০। সেও দিনমজুর। নবম শ্রেণিতে স্কুল ছেড়ে দেয় দাদা।
আমার যখন ১০ বছর বয়স, তখন বাবা আমাকে বলেছিলেন, "এখনই কাজ শুরু কর, তোর আর পড়াশোনার দরকার নেই।” আর তিনিই শুধু নন, প্রতিদিন একজন বয়স্ক মহিলার সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার পথে দেখা হত, তিনিও একবার আমাকে রেগে বলেছিলেন: “তোর দিদিরা স্কুলে যায়নি, তোরই বা কি দরকার? তুই কি মনে করিস, পড়াশোনা করলেই চাকরি পাবি?’’


বাঁদিকে: যমুনা নিজের পরিবারের সঙ্গে নাথযোগী গ্রাম, নাভ খুর্দে নিজেদের বাড়ির সামনে। ডানদিকে: এই নাথযোগী সম্প্রদায়ের সর্বপ্রথম দশম শ্রেণি উত্তীর্ণ মেয়েদের মধ্যে একজন যমুনা। ছবি: অঞ্জলি সুখলাল শিন্ডে
এমনকি আমার কাকাও আমার বাবা-মাকে প্রায়শই বলতেন তাঁরা যেন আমার বিয়ে দিয়ে দেন, আমার বাবাও এতে যোগ দিতেন। আমি মাকে বলতাম, "বাবাকে বলো, আমার সঙ্গে বা অন্য কারও সঙ্গে আমার বিয়ের বিষয়ে যেন আলোচনা না করে, আমি পড়াশোনা করতে চাই।”
পরে, যখন আমি দশম শ্রেণি পেরোলাম তখন এক সাংবাদিক আমার সাক্ষাত্কার নিতে আসেন, তখন আমার বাবা কেঁদে ফেলেছিলেন। তিনি ভদ্রলোককে বলেছিলেন, "আমি খুব খুশি যে আমার মেয়ে আমার কথা না শুনে তার পড়াশোনা নিয়ে এগিয়েছে।"
‘পড়াশোনা কেন জরুরি?’
যখন আমার সাত বছর বয়স, তখন আমি স্কুল যেতে শুরু করি। পাশের গ্রাম, পলশী সুপোর স্কুল থেকে দুইজন শিক্ষক ইস্কুলে যেতে পারে এমন সম্ভাব্য পড়ুয়ার নাম নিতে এসেছিলেন। আমার নামটা কেউ তাদের দিয়ে দিয়েছিল, তাই আমি সেখানকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হই।
এর একবছর পরে আমাদের গ্রামেই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় শুরু হলে আমি সেখানে চলে আসি। ৫ম শ্রেণিতে ওঠার পর আমি তহসিল সদর জালগাঁও থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে জামোদের মহাত্মা ফুলে নগর পরিষদ বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। স্কুলে পৌঁছানোর জন্য আমি প্রথমে দুই কিলোমিটার হাঁটতাম, তারপর অটো ধরে সদর বাসস্ট্যান্ডে নামতাম এবং সেখান থেকে স্কুল অবধি আবার আরও এক কিলোমিটার হাঁটতাম। অটোয় যেতে প্রায় আধ ঘণ্টা সময় লাগত, একদিকেই ত্রিশ টাকা খরচ হত। আমরা গ্রামের ছয়জন মেয়ে একই স্কুলে পড়তাম বলে আমরা সবসময় একসঙ্গেই যাতায়াত করতাম।
একবার বর্ষার সময়, আমাদের গ্রামের কাছে নদীতে জলস্তর বেড়ে গেছিল। মূল রাস্তায় পৌঁছাতে আমাদের এই নদী পার করতে হত। আমরা সাধারণত আমাদের পায়ের নিচের অংশটুকু ভিজিয়ে, পায়জামা গুটিয়ে নিজেদের জুতোগুলিকে হাতে নিয়ে নদী পার হতাম। তবে সেদিন জলটা আমাদের কোমর পর্যন্ত চলে এসেছিল, আমি আমাদের গ্রামের এক ব্যক্তিকে নদীর ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললাম, "কাকা, আমাদের নদী পার হতে একটু সাহায্য করুন না।" তিনি চিৎকার করে বললেন, “তোমরা সব ঘরে ফিরে যাও! তুমি কেন এই অবস্থায় স্কুলে যেতে চাইছ? বন্যা হচ্ছে, আর এর মধ্যে, তুমি পড়াশোনা করতে চাও? মেয়েদের ঘরে বসে থাকা উচিত, পড়াশোনা করার দরকারটাই বা কি?” আমরা সেদিন ইস্কুলে যেতে পারিনি। পরদিন ক্লাসে আমাদের শিক্ষক ধরে নিলেন যে আমরা সবাই মিথ্যা বলছি, তাই শাস্তি বাবদ আমাদের সবাইকে ক্লাসরুমের বাইরে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন।


বাঁদিকে: যমুনাকে স্কুলে যেতে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হত, বর্ষার মরসুমে পরিস্থিতি আরও খারাপ হত। ছবি: অঞ্জলি সুখলাল শিন্ডে। ডানদিকে: অর্চনা ভীমরাও সোলাঙ্কে, যমুনা সোলাঙ্কে, অঞ্জলি সুখলাল শিন্ডে এবং মমতা নাভাল সোলাঙ্কে - নাথযোগী সম্প্রদায়ের দশম শ্রেণি উত্তীর্ণ প্রথম মেয়েরা। ছবি: রাজেশ রামরব সোলাঙ্কে
আবারও যখন একই ঘটনা ঘটল তখন আমি আমার মাকে ফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে বলি। তখন অবশেষে আমাদের বিশ্বাস করলেন তিনি আর তারপরে নিজে আমাদের গ্রামে এসে যা আমরা বর্ণনা করেছিলাম তা স্বচক্ষে দেখে গেলেন।
অটো করে যাতায়াত করা খুব খরচা-সাপেক্ষ। আমি যখন নবম শ্রেণিতে পড়ি তখন আমি জলগাঁও জামোদ বাসস্ট্যান্ডের রাজ্য পরিবহণ অফিসে এই মর্মে একটি আবেদন জমা দিই যে সকাল ৯টার মধ্যে আমার গ্রামে বাসটি যেন পাঠানো হয়। মানব বিকাশ বাসটি কেবল মেয়েদের জন্যই বরাদ্দ এবং এতে যাতায়াতের জন্য কোনও রাহাখরচ হত না, তবে এটি সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ আমাদের গ্রামে পৌঁছত। ফলে এই বাস ধরলে আমাদের স্কুলে ঢুকতে বেজায় দেরি হয়ে যেত।
এই আবেদনটিতে চার কিলোমিটার দূরে ইসলামপুর গ্রামে বসবাসকারী দু-জন মেয়ে সহ বাসটি ব্যবহার করে এমন ১৬ জন মেয়ে সই করেছিল।
অফিসার আমাদের অনুরোধে রাজি হয়ে সেদিন আমাদের কথা দিয়েছিলেন যে পরদিন থেকে সকাল ৯টায় বাসটি ওখানে থাকবে। সেদিন সত্যিই বাসটি এসেছিল, আমি তাতে খুব খুশি হয়েছিলাম! তবে এই সুবিধা কেবলমাত্র একদিনই স্থায়ী হয়েছিল। পরদিন বাসটি এল না দেখে আমরা অফিসারের কাছে ফিরে যাওয়ায় তিনি বললেন, “বাস অন্য গ্রাম থেকে আসে এবং সেখানকার লোকেরা সময় বদলাতে চায় না। আমি তো আর এমন কোনও বাস পাঠাতে পারি না যা কেবলমাত্র তোমার সময় মেনে চলবে।" বরং তিনি আমাদের পরামর্শ দিলেন যে আমরা যেন আমাদের ক্লাসের সময়টাই পাল্টে নিই – এটা আদৌ সম্ভব?
বাসে যাতায়াত করার সময় আমাদের অন্যান্য সমস্যাও আছে। একবার আমি আর আমার বন্ধু একটা রাষ্ট্রীয় ট্রান্সপোর্টের বাসে উঠেছিলাম, সেবার একটি ছেলে আমার বন্ধুর ওড়না টেনে চিৎকার করে বলে ওঠে, "মোহিদিপুরের মেয়েরা, বেরিয়ে যাও!" অন্যান্য ছেলেরাও তার সঙ্গে যোগ দিল, আর তারপর বাজেরকম ঝামেলা হয়েছিল। মোহিদিপুরে আমাদের নাথযোগী সম্প্রদায় বাস করে। ওই ছেলেরা আসলে নাথযোগী সমাজের মেয়েদের সঙ্গে বাসে যেতে চায়নি। আমি ভীষণ রেগে গেছিলাম, বাস জলগাঁও জামোদে পৌঁছলে ছেলেটিকে আমি রাজ্য পরিবহন অফিসে নিয়ে গেলাম। কন্ডাক্টর হস্তক্ষেপ করেন, তিনি ওদের বলেছিলেন যে বাসটি সবার জন্য। তবে এসব জিনিস থেমে যায়নি, তাই আমরা অটোতেই যাতায়াত করতে পছন্দ করতাম।
আমার তখন বয়স ১৫। বাবা আমাদের বাড়িটি নিজের নামে করার চেষ্টা করছিলেন। বাড়িটা আমার দাদুর নামে ছিল, তিনি আমার বাবাকে উপহার দিয়েছিলেন। তবে আমাদের গ্রামের যে লোকটি এই কাজটা করেন, তিনি এই বন্দোবস্ত করার জন্য ৫,০০০ টাকা দাবি করেছিলেন। আমার বাবার কাছে এত টাকাই নেই। আমরা তাঁকে বহুবার অনুরোধ করেছি, কিন্তু তিনি টাকা ছাড়া কিছুতেই এই কাজ করবেন না। বাড়িটি আমাদের নামে না হলে আমরা পাকা বাড়ি করার জন্য সরকারি সহায়তাও পাব না।


বাঁদিকে: যমুনা রান্নাবান্না সেরে মা-বাবার সঙ্গে মাঠের কাজে যোগ দেয়। ডানদিকে: বাড়ি পাকা করার জন্য প্রদেয় সরকারি যোজনার সুবিধে তার পরিবার নিতে পারেননি। ছবি: অঞ্জলি সুখলাল শিন্ডে
আমি পড়াশোনা করে একদিন বড়ো আধিকারিক হতে চাই। তখন আমাদের মতো দরিদ্র মানুষকে
কাজ করানোর জন্য আর ঘুষ দিতে হবে না।
সরকারি স্কুলে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনো বিনামূল্যেই হয়, আর নির্দিষ্ট কোনও ইউনিফর্মও নেই। তবে ৯ম শ্রেণি থেকে পাঠ্যপুস্তক এবং নোটবুক কিনতে হত, এগুলোর দাম পড়ত প্রায় ১০০০ টাকা, এবং এক একটা স্কুল ইউনিফর্মের দাম ছিল ৫৫০ টাকা। একটা স্কুলের ইউনিফর্ম কেনার মতো যথেষ্ট টাকা আমার ছিল না। গোটা একটা টার্মের জন্য বাইরে থেকে নেওয়া ট্যুইশনের জন্য আরও ৩,০০০ টাকা খরচ হয়, এটা আমি কেবলমাত্র একটি টার্মের জন্যই নিতে পেরেছিলাম, এবং পরের টার্মে আমার স্কুলের শিক্ষককেই আমার পড়াশুনায় সাহায্য করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম।
এইসব খরচ বহন করার জন্য চালানোর জন্য, ৯ম শ্রেণিতে ওঠার আগের গ্রীষ্মকালে, আমি আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে মাঠে কাজ করতে শুরু করি। ভোর চারটায় উঠে এক ঘণ্টা পড়াশোনা করতাম। আমার বাবা মা এবং দাদা তখন কাজে রওনা দিত। এক ঘণ্টা পড়াশোনা করার পরে ভাখরি [হাতে গড়া রুটি] এবং ভাজি [তরকারি] রান্না করে মাঠে নিয়ে যেতাম।
আমি ৭টা নাগাদ তাঁদের সঙ্গে কাজে যোগ দিতাম সকাল, আর ৯টা অবধি কাজ করতাম। প্রতি ঘণ্টার জন্য ২৫ টাকা করে পারিশ্রমিক পেতাম। সকাল সাড়ে ৯.৩০টা নাগাদ আমি বাড়ি ফিরে আসতাম, তারপর স্কুলে যেতাম। স্কুল থেকে ফিরে আসার পরে আমি আবার মজুরির কাজে বেরতাম। এমনকি ছুটির দিনেও কাজ করেছি।
‘আমি জেতায় বিশ্বাসে করি’

যমুনা তার প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ভৌলাল বাবরের সঙ্গে। এই মাস্টারমশাই তাঁকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য উত্সাহ দিয়েছিলেন। ছবি: অঞ্জলি সুখলাল শিন্ডে
গতবছর [২০১৯], আমি জল শক্তি অভিযান [জল সম্পদ বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রক] আয়োজিত ব্লক স্তরের প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় একটি ট্রফি জিতেছি। বুলডানার জেলা পর্যায়ের বিজ্ঞান প্রদর্শনীতে জৈব সার সম্পর্কে আমার প্রকল্পের জন্য দ্বিতীয় পুরস্কারও পেয়েছি। আর আমার স্কুলের দৌড় প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছি। আমি জেতায় বিশ্বাস করি, আমাদের নাথযোগী সম্প্রদায়ের মেয়েরা তো কখনই জেতার সুযোগটুকুও পায় না।
অগস্ট মাসে, আমি একদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনার জন্য জলগাঁও জামোড শহরের দ্য নিউ এরা হাই স্কুলে ভর্তি হয়েছি। এটি একটি বেসরকারি স্কুল, এখানে বছরে খরচ পাঁচ হাজার টাকা। আমি বিজ্ঞান বেছে নিয়েছি - গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ছাড়া আমি ইতিহাসও নিয়েছি কারণ আমি শুনেছি যে ইতিহাস পড়লে সিভিল সার্ভিস চাকরির প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করবে। আমাকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বরাবর উত্সাহ দিয়ে এসেছেন আমার প্রাইমারি স্কুলের মাস্টার মশাই শ্রী ভৌলাল বাবর, তিনি আমার গ্রাম তথা আমাদের সমাজেরই মানুষ। এখন আমার ১৮ বছর বয়স হয়েছে, আমার স্বপ্ন সিভিল সার্ভিসে যাওয়া।
স্নাতক স্তরের পড়াশুনোর জন্য, আমাকে পুণে বা বুলডানা শহরে চলে যেতে হবে, যেহেতু এই শহরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় আছে। লোকে বলে যে আমার বাস কন্ডাক্টর বা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর কাজ নেওয়া উচিত কারণ সেক্ষেত্রে আমি তাড়াতাড়ি চাকরি পাব। কিন্তু, যা আমার ইচ্ছে, আমি তাই-ই হব।
কাউকেই আর এমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না। আমি আমার সমাজের মানুষকে তাঁদের অধিকারগুলির বিষয়ে সচেতন করতে পারব, তাঁদের শেখাব যাতে তাঁরা শক্তিশালী লোকদের আর ভয় না পান। ভিক্ষাবৃত্তির উপর আমাদের সমাজের নির্ভরতা এবং মেয়েদের একেবারে বাচ্চা বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেওয়ার রীতির পরিবর্তন করতে চাই। ভিক্ষাই নিজের পেট ভরানোর একমাত্র পথ নয়; শিক্ষাও পেট ভরার উপায় হতে পারে।
লকডাউনের কারণে লোকজন গ্রামে ফিরে এসে এখন দিনমজুরির কাজ খুঁজছে। আমার পরিবার বাড়িতেই আছে, আমরা এখনও কোনও কাজ পাইনি। বাবা আমাকে স্কুলে দাখিল করার জন্য গ্রামের একজন বয়স্ক মানুষের কাছ থেকে ধার করেছিলেন। এই টাকা ফেরত দেওয়াটা এখন খুব কঠিন হয়ে উঠেছে। যে কোনও কাজ পেলে আমরা করতে রাজি আছি, তবে কিছুতেই ভিক্ষা করতে পারব না।
প্রশান্ত খুন্তে পুণে ভিত্তিক স্বতন্ত্র মারাঠি সাংবাদিক। এই প্রতিবেদন লিখতে তিনি সাহায্য করেছেন।
অনুবাদ: সায়নী চক্রবর্ত্তী