জব প্যার কিয়া তো ডরনা ক্যা...প্যার
কিয়া কোই চোরি নহিঁ...ঘুট্ ঘুট্ কর্ য়্যুঁ মরনা ক্যা...
প্রেম করেছি, ভয় কিসের... চুরি করিনি তো, প্রেমে পড়েছি...দমবন্ধ হয়ে মরা কেন তবে...
বেশ কিছুদিন হল, ছয়ের দশকের মুঘল-এ-আজম সিনেমার প্রবাদপ্রতিম গানটা গুনগুন করে গেয়েই চলেছেন বিধি। মধ্য মুম্বইয়ে তাঁর সদ্য ভাড়া নেওয়া কামরায় বসে, খানিকের তরে গুঞ্জন থামিয়ে বললেন, “আমরাও তো কোনও খুনখারাপি করিনি। তাহলে এমন ভয়ে ভয়ে বাঁচব কেন?”
নাহ্, প্রশ্নটা আলঙ্কারিক নয় মোটেও, বরং ছিনে জোঁকের মতো লেগে আছে তাঁর জীবনে। বিধির ক্ষেত্রে খুন হওয়ার ভয়টা যে হাড়হিম করা বাস্তব। বাড়ি লোকের কথা না মেনে, ইস্কুলের সহপাঠী আরুষির সঙ্গে ঘর ছেড়ে পালানোর পর থেকে এই ভয়টা নিয়েই বেঁচে আছেন তিনি। একে অপরকে বড্ড ভালোবাসেন তাঁরা, বিয়ে করতে ইচ্ছুক — অথচ হাজারো সমস্যায় ভরা সুদীর্ঘ পথ না পেরিয়ে আইনের চোখে এ মিলন বৈধ হতে পারবে না কোনদিন। বিধি বা আরুষি কারও বাড়ির লোক তাঁদের এই সম্পর্কটা মেনে নেবে না, জোরজবরদস্তি চাপিয়ে দেওয়া ‘স্ত্রীলিঙ্গ’ পরিচয়ের বিরুদ্ধে আরুষি যে কতটা মরিয়া লড়াই করছেন — সেটা বোঝারও চেষ্টা করবে না কেউ। আরুষি আজ রূপান্তরকামী পুরুষ রূপে পরিচয় দেন নিজের, স্বেচ্ছায় নাম বদলে আরুষ করে নিয়েছেন।
মহানগরীতে এসে দুজনে ভেবেছিলেন, আত্মীয়স্বজনের থাবা থেকে মুক্তি পেলেন বুঝি। বিধির পরিবার থাকে থানে জেলার একটি গ্রামে, পাশেই পালঘর জেলায় মোটে ২০ কিমি দূরত্বে আরুষের বাড়ি। আগ্রি জাতির ২২ বছর বয়সি বিধি মহারাষ্ট্রে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিসমূহের (ওবিসি) তালিকাভুক্ত। জাতিগত পরিচয়ে আরুষ কুনবি। এটি ওবিসি হওয়া সত্ত্বেও গ্রামগুলিতে প্রচলিত কঠোর বর্ণবাদী ব্যবস্থার নিরিখে আগ্রিদের ‘নিচে’।
আজ একবছর হয়ে গেল ঘর ছেড়ে মুম্বইয়ে এসে আছেন তাঁরা, ফিরে যাওয়ার একফোঁটাও ইচ্ছে নেই। গাঁয়ে ফেলে আসা পরিবারের কথা মুখেও আনতে চান না আরুষ, শুধু এটুকুই বললেন: “কাচ্চা (মাটির) বাড়িতে থাকতাম, বরাবরই লজ্জা লাগত তাই। ওটা নিয়ে হামেশাই আইয়ের [মা] সঙ্গে ঝগড়া হত।”
একটা ডিমের কারখানায় কাজ করেন আরুষের মা, মাসিক বেতন ৬,০০০ টাকা। “বাবার কথা জানতে চাইবেন না দয়া করে। যখন যেমন কামকাজ জুটত, সেটাই করতেন: ছুতোরের কাজ, খেতমজুরি জাতীয় যে কোনও কাজ। পয়সাকড়ি যেটুকু হাতে আসত, তা মদের পিছনে উড়িয়ে বাড়ি এসে আই আর আমাদের পেটাতেন,” জানালেন আরুষ। পরে অবশ্য অসুস্থতার কারণে কর্মক্ষমতা হারিয়ে স্ত্রীর রোজগারের উপরেই নির্ভর করতে শুরু করেন তাঁর বাবা। মোটামুটি এই সময় থেকেই ইস্কুলের ছুটিছাটায় ইটভাটা, কলকারখানা কিংবা ওষুধের দোকানে কাজ করতে শুরু করেন আরুষ।
*****
২০১৪ সালে নতুন ইস্কুলে ভর্তি হওয়ার পর বিধির সঙ্গে আলাপ হয় আরুষের, তখন তাঁদের অষ্টম শ্রেণি। বাড়ি থেকে হাঁটাপথে ৪ কিলোমিটার পেরোলে তবে এই ইস্কুলে পৌঁছানো যায়। “গাঁয়ের ওই জেলা পরিষদ স্কুলটা ক্লাস ৭ অবধি ছিল, তারপর অন্য স্কুলে না গিয়ে উপায় ছিল না,” বললেন তিনি। তবে নতুন ইস্কুলে একসঙ্গে পথ চলা শুরু হলেও প্রথম বছরটা পরস্পরের তেমন আলাপচারিতা ছিল না। আরুষের কথায়, “আগ্রি লোকজনের সঙ্গে আমাদের বনিবনা ছিল না তেমন। আমাদের থেকে ওরা আলাদা তো, আর বিধি তো ওই জাতিরই লোক।”
বন্ধুত্ব জমাট বাঁধে নবম শ্রেণিতে ওঠার পর। ততদিনে বিধিকে বেশ ভালো লাগতে শুরু করেছে আরুষের।
একদিন, খেলাধূলার সময় বিধির দলে যোগ দেয় কিশোর আরুষ, কানে কানে চালাচালি হয়ে যায় হৃদয়ের গোপন খবর। হাজার জড়তা কাটিয়ে প্রকাশ পেল বিধির প্রেমে আরুষের হাবুডুবু খাওয়ার কথা। বিধি তখন প্রবল দোটানায়। তাঁর নিজের কথায়: “এর আগেও অন্য আরেক মেয়ের সঙ্গে ওর সম্পর্ক ছিল, সেকথা জানিয়েছিল আরুষ। ব্যাপারটা খারাপ কিছু নয়, তবে ওদের [দুটি মেয়ের] এভাবে মেলামেশাটা কেমন যেন আজব ঠেকছিল।”
“গোড়ায় তো আমি সোজা ‘না’ বলে দিয়েছিলাম, তবে শেষমেশ আমি রাজি হয়ে যাই। ‘হ্যাঁ’ যে কেন বলেছিলাম, তা আমি সত্যিই জানি না। সবকিছু যেন আপনাআপনিই ঘটে যাচ্ছিল। ওকে যে ভীষণ ভালো লাগত। ঠিক-ভুলের গণিত থেকে তখন আমাদের মন অনেক দূরে,” স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বিধির সংযোজন, “ক্লাসের একটা বান্দাও টের পায়নি আমাদের বিষয়ে।” পাশ থেকে আরুষ বললেন, “দুটো মেয়ে হরিহর আত্মা, বাদবাকি দুনিয়ার চোখে এটাই আমাদের পরিচয় তখন।”
যথারীতি কিছুদিন যেতে না যেতেই, দুজনের এতো ভাব আর জাতপাতের বিভেদ নিয়ে আত্মীয়স্বজনের মধ্যে ফিসফিসানি শুরু হয়ে যায়। “আমাদের পরিচয় দাঁড়িয়ে যায় আগ্রি গেরস্থালিতে চাকর-বাকরের কাজ করা লোক, ওদের চাইতে অপেক্ষাকৃত নিচু জাতি বলেও ধরা হয়। এসব মান্ধাতার আমলের কথা ঠিকই, তবে মানুষের মনে এখনও এসব গেঁথে আছে,” বুঝিয়ে বললেন আরুষ। বছয় কয়েক আগে, তাঁর গ্রামের এক বিষমকামী যুগল পালিয়ে যাওয়ায় যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, সেকথা তিনি ভুলতে পারেন না। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন কুনবি জাতির, অন্যজন আগ্রি। দুজনের বাড়ির লোকজন মিলে ধাওয়া করে পাকড়াও করে আনে দম্পতিটিকে, তারপর নেমে আসে শারীরিক নিগ্রহ।
আরুষের মা অবশ্য গোড়ার দিকে ওদের বন্ধুত্বটা নিয়ে তেমন মাথা ঘামাননি। ভেবেছিলেন, মেয়ে দুটো খুবই ভালো বন্ধু। তবে হ্যাঁ, আরুষের ঘনঘন বিধির বাড়ি যাওয়াটা মোটেই পছন্দ করতেন না, সেটা বন্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন তিনি।
ঘরবাড়ি বানানোর ইমারতি কাঁচামাল সরবরাহের ব্যাবসা ছিল বিধির বাবার। ১৩ বছর বয়সে বিধি মা-বাবার ছাড়াছাড়ি হতে দেখেছেন। দ্বিতীয়বার বিয়ে করে বাবা নতুন সংসারও পেতে ফেলেছেন। বাবা, বড়দা, দুই বোন, এক সৎভাই ও সৎমায়ের সঙ্গে থাকতেন বিধি। আরুষকে দুচোখে দেখতে পারতেন না বিধির নতুন মা, ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকত। পরিবারের উপর ছড়ি ঘোরাত বিধির বড়দা, এখন বয়স তিরিশ পেরিয়েছে। মাঝেসাঝে বাবার সঙ্গে কাজে যেত সে। আর বোনদের মারধর করাটা তার জন্য ছিল জলভাত।
বিধি আরুষের বাড়ি গেলে সে আবার মাঝেমধ্যে বোনকে পৌঁছে দেওয়ার নাম করে দোসর হত। “বড়দা নানান মন্তব্য করত, বলত যে আরুষকে নাকি ওর খুব ভাল্লাগে। অসহ্য লাগত। বুঝে উঠতে পারতাম না এর মোকাবিলা করব কেমন করে আমরা,” স্মৃতিচারণ করছিলেন বিধি, “নির্বিঘ্নে দেখাসাক্ষাৎ চালিয়ে যাওয়ার জন্য দাদার ওই বেলেল্লাপনাগুলো মুখ বুজে সহ্য করত আরুষ।”
শেষে একদিন বড়দাও বেঁকে বসে, বোন যে আরুষের বাড়ি যাচ্ছে এটা আর সহ্য হচ্ছিল না তেনার। বিধির কথায়, “আরুষ ওর পিরিতির প্রস্তাবের জবাব দেয়নি বলে রেগে গেল, নাকি আমাদের ঘনিষ্ঠ হওয়াটা পোষায়নি, সেটা ঠিক জানি না।” আরুষ কেন ঘনঘন তাদের বাড়ি আসছে, কেনই বা হররোজ এতবার করে ফোন আর টেক্সট করছে, এ বিষয়ে সওয়াল করতে থাকে বিধির বোনও।
মোটের উপর এই সময়েই নিজস্ব লৈঙ্গিক অগ্রাধিকারের বিষয়ে ক্রমশ মুখর হয়ে উঠছিলেন আরুষ, তিনি যে পুরুষের দেহ চান, সেটাও বুঝিয়ে দেন। তবে বিধি ছাড়া এসকল ভাবনা ভাগ করে নেওয়ার মতো আর কেউই ছিল না তাঁর। আরুষের কথায়, “‘রূপান্তরকামী পুরুষ’ কাকে বলে, সে ব্যাপারে তখন আমার বিন্দুবিসর্গ ধারণা ছিল না। তবে আমার মনের গভীর থেকে নিজেকে পুরুষের অবয়বে দেখার আকুতিটা যে তৈরি হয়েছে, সেটা তখনই টের পেয়েছিলাম।”
ট্র্যাক প্যান্ট, কার্গো প্যান্ট আর টি-শার্ট ছিল তাঁর পছন্দের পোশাক। তবে, আরুষ যে প্রকাশ্যে লোক দেখিয়ে পুরুষালি জামাকাপড় পরতে চাইছেন, এটা তাঁর মায়ের সহ্য হত না, সেসব পোশাক-আশাক লুকিয়ে ফেলার বা ছিঁড়েখুঁড়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেন তিনি। আরুষ ছেলেদের মতো সাজলে বকাঝকা করতেন, চড়চাপড়ও বসিয়ে দিতেন। তার জন্য মেয়েদের কাপড়জামা কিনে আনতেন। “সালোয়ার কামিজ পরতে একফোঁটা ভালো লাগত না,” জানালেন আরুষ। ইস্কুলে অবশ্য সালোয়ার পরতেই হত, কারণ ওটাই যে মেয়েদের ইউনিফর্ম। আর এতে যে তাঁর “দমবন্ধ” হয়ে আসত, সেটা অকপটে বলে দিলেন।
দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় আরুষের মাসিক ঋতুস্রাব শুরু হতে তাঁর আই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন, তবে সে স্বস্তিটা ছিল সাময়িক। একবছরের মধ্যেই ঋতুচক্র অনিয়মিত হয়ে পড়ে, শেষমেশ বন্ধও হয়ে যায়। আরুষকে ডাক্তার-বদ্যি তথা ওঝার কাছে নিয়ে যেতে থাকেন তাঁর মা, একেকজন একেক রকমের বড়ি আর পাঁচন খেতে দেন, কিন্তু কিছুতেই আর সুরাহা হয় না।
পাড়া-পড়শি, শিক্ষক, সহপাঠী, সব্বাই ইয়ারকি-ঠাট্টা শুরু করে আরুষকে নিয়ে। “ওরা বলত, ‘একটু মেয়েদের মতো হ রে...লাগামছাড়া হোস না।’ আমার বিয়ের বয়স হয়েছে, এটাও মনে করিয়ে দিয়েছিল।” সামাজিকভাবে অন্যদের থেকে এভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় নিজের উপরেই সন্দেহ করতে শুরু করেন আরুষ, নিজেকে নিয়ে বিরক্তির শেষ ছিল না তাঁর। “মনে হত আমি যেন কিছু একটা খারাপ কিছু করেছি,” জানালেন তিনি।
ক্লাস ইলেভেনে উঠে প্রথমবার হাতে মোবাইল ফোন পান আরুষ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখতেন লিঙ্গ স্বীকৃতি অপারেশনের মাধ্যমে আদৌ শরীরকে নারী থেকে পুরুষে রূপান্তরিত করা যায় কিনা। গোড়ার দিকে কিন্তু-কিন্তু ভাবটা কাটছিল না বিধিরও। তাঁর কথায়, “ও যেরকম, ঠিক সেরকমটাই তাকে পছন্দ ছিল আমার; শুরু থেকেই নিজেকে নিয়ে সৎ ছিল ও। নিজের শরীরটা বদলাতে চাইছিল ঠিকই, কিন্তু তার মানে তো এই নয় যে ওর মনটাও বদলে যাবে।”
*****
২০১৯ সালে, দ্বাদশ শ্রেণি অবধি পড়ে ইস্কুলজীবনে ইতি টানেন বিধি। পুলিশ আধিকারিক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পালঘরের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দাখিলা নেন আরুষ, পুলিশের চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু হয়। আরুষির পরিচয়ে মহিলা চাকরিপ্রার্থী হিসেবেই নাম লেখাতে বাধ্য হয়েছিলেন। পরীক্ষাটা ২০২০ সালে হওয়ার কথা ছিল বটে, কিন্তু কোভিড-১৯ অতিমারির ফলে দেশজুড়ে জারি হল লকডাউন, পরীক্ষাও গেল বাতিল হয়ে। তখন দূরত্বশিক্ষার মাধ্যমে কলাবিদ্যায় স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করবেন বলে মনস্থির করেন আরুষ।
লকডাউনের মোকাবিলা করতে গিয়ে হন্যে হয়ে গিয়েছিলেন দুজনে। বিধির বাড়ির লোক তাঁর বিয়ের জন্য কথাবার্তা চালাচ্ছিল। কিন্তু তিনি যে নিজের জীবনটা আরুষের সঙ্গেই কাটাতে চান, এ ব্যাপারে বিধির মনে কোনও দ্বন্দ্ব ছিল না। বাড়ি-পালানো ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। অতীতে অবশ্য আরুষ এমন প্রস্তাব দিলে তিনি খারিজ করে দিয়েছেন। “বড্ড ভয়-ভয় লাগত...সবকিছু ছেড়েছুড়ে চলে যাওয়াটা মোটেও মুখের কথা নয়,” তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি।
লকডাউনের পর, ২০২০-এর অগস্টে, মাসিক ৫,০০০ টাকা বেতনে একটি ওষুধ তৈরির কারখানায় কাজে ঢোকেন আরুষ। “আমি যে ঠিক যেভাবে বাঁচতে চাই, সেটা কেউ বুঝত না। দমবন্ধ হয়ে আসত। পালানোটাই যে একমাত্র উপায়, এটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম।” বিধি ও তাঁর নিজের নিরাপত্তার জন্য তিনি সেই সব সংগঠন তথা বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন যারা গার্হস্থ্য হিংসায় আক্রান্তদের সহায়তায় কাজ করে।
কলঙ্ক ও হেনস্থার জেরে অসংখ্য রূপান্তরকামী মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হন সুরক্ষিত আশ্রয়ের খোঁজে — এটা গ্রামীণ ভারতের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ২০২১ পশ্চিমবঙ্গের রূপান্তরকামী মানুষদের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছে যে, “পারিবারিক চাপে তাঁরা নিজ নিজ লৈঙ্গিক অভিব্যক্তি গোপন করে রাখতে বাধ্য হন।” পরিবার, বন্ধুবান্ধব তথা সামাজিক স্তরে বৈষম্যমূলক আচরণ সহ্য না করতে পেরে গৃহত্যাগী হয়েছেন প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ রূপান্তরকামী।
আরুষ ও বিধির মনে হয়েছিল, মুম্বই শহরটা বুঝি তাঁদের পক্ষে সুগম হবে। আরুষের অস্ত্রোপচারটাও করা যাবে ওখানে। তাই, ২০২১ সালের মার্চ মাসের এক বিকেলবেলায় হাসপাতালে যাওয়ার ছুতোয় ঘর ছাড়েন বিধি, ওদিকে আরুষ ততক্ষণে কাজে বেরিয়ে পড়েছেন। মাঝরাস্তায় দুজনে দেখা করে একটি বাসে উঠে পড়েন। সম্বল বলতে রোজগার থেকে তিলে তিলে সঞ্চিত ১৫,০০০ হাজার টাকা সঙ্গে ছিল আরুষের। এছাড়াও তাঁর মায়ের সবেধন নীলমণি সোনার হার আর একজোড়া কানের দুল বেচে ১৩,০০০ টাকা পেয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “সোনাদানা বেচতে মন চায়নি। কিন্তু বড্ড বিক্ষিপ্ত ছিল মনটা, তাই খানিক ভরসার জন্য ওই টাকাটা হাতে রেখেছিলাম। বাড়ি ফেরা তো আর হবে না, তাই কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছিলাম না।”
*****
উর্জা ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত মহিলাদের জন্য একটি আশ্রয় আবাসন রয়েছে মুম্বইয়ে, দুজনে শহরে পা রাখতেই একটি এনজিওর স্বেচ্ছাকর্মীরা সেখানে নিয়ে যায় তাঁদের। জানান দেওয়া হয় স্থানীয় পুলিশদের। মানবাধিকার কর্মী তথা উর্জা ট্রাস্টের কার্যক্রম পরিচালক অঙ্কিতা কোহিরকারের কথায়, “ওঁনারা প্রাপ্তবয়স্ক, তাই পুলিশকে জানানোর আইনি কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু মাঝসাঝে, কিছু কিছু জটিল কেসে বাড়ির লোকজন ক্ষতি করতে পারে, তাই তাঁদের নিরাপত্তার জন্যই স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করি আমরা।”
কিন্তু হায়, পদক্ষেপটা নেওয়ার ফলে হিতে বিপরীত হয়েছিল। থানায় যাওয়া মাত্র অফিসারেরা জেরা করতে লাগলেন। “বারবার করে আমাদের গাঁয়ে ফিরে যেতে বলছিলেন, এই ধরনের সম্পর্ক নাকি টিকবেই না। এসব নাকি বাজে কাজ,” মনে করে বলছিলেন আরুষ। দুজনের বাবা-মাকেই এত্তেলা পাঠায় পুলিশ, এমনিতেই সন্তানেরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল বলে সবাই রেগে আগুন হয়েছিলেন। ততদিনে নিকটবর্তী থানায় আরুষের মা নিরুদ্দেশ ডায়েরি লিখিয়ে এসেছেন, আর ওদিকে বিধির পরিবার আরুষের বাড়ি গিয়ে হুমকিও দিয়ে ফেলেছে।
দম্পতির অবস্থান জানতে পেরে সেদিনই দুই পরিবার এসে হাজির হল মুম্বইয়ে। “শান্তশিষ্টভাবে ভাই [বড়দা] আমায় ফিরে আসতে বলে। তার আগে ওকে ওরকমভাবে কথা বলতে কক্ষনো দেখিনি। আসলে পুলিশ ছিল তো, তাই,” জানালেন বিধি।
আরুষের মা-ও তাঁদের ফিরে আসতে পিড়াপিড়ি করেছিলেন। “পুলিশগুলো তো সটান আইকে বলে দিল আমাদের যেন সঙ্গে করে নিয়ে যায়, কারণ ওই সেন্টারটা মেয়েদের জন্য নাকি ঠিকঠাক জায়গা নয়,” মনে করে বললেন আরুষ। সৌভাগ্যক্রমে উর্জার কর্মীরা এসে হাজির হন এবং যুগলকে জোরজবরদস্তি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া থেকে আটকান। মায়ের গয়না বেচে যে টাকাটা পেয়েছিলেন, সেটাও ফিরিয়ে দেন আরুষ। তাঁর কথায়, “ওটা নিজের কাছে রেখে দেওয়াটা আমার ভালো ঠেকছিল না।”
গ্রামে ফিরেই বিধির পরিবার যৌনব্যবসায় যুক্ত করা তথা বলপূর্বক বিধিকে গুম করার অভিযোগ আনে আরুষের বিরুদ্ধে। বিধির বড়দা ও আত্মীয়ের দল আজ অবধি খুনখারাপির হুমকি দিয়ে যাচ্ছে আরুষের বাড়ির লোকজনকে। “মামলাটা নিষ্পত্তি করার ছুতোয় ও [বিধির বড়দা] আমার ভাইকে একা দেখা করতে বলে। কিন্তু ভাই যেতেই চায় না; ওরা যা ইচ্ছা তাই করে ফেলতে পারে,” বলে উঠলেন আরুষ।
*****
মধ্য মুম্বইয়ের শেল্টারে থাকা সত্ত্বেও নিরাপত্তার অভাব বোধ করতেন আরুষ ও বিধি। “কাউকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কে জানে কখন আবার গাঁয়ের কেউ ফিরে আসে,” জানালেন আরুষ। তাই আগাম ১০,০০০ টাকা দিয়ে একটি ভাড়াবাড়িতে উঠে যান তাঁরা। মোটে একখানি কামরা, ভাড়া মাস গেলে ৫,০০০ টাকা। “বাড়িওয়ালা আমাদের সম্পর্কটার ব্যাপারে জানেন না কিছু। আমাদের লুকোতেই হবে। কামরাটা ছাড়তে চাই না।”
আপাতত নিজের অগ্রাধিকার মতো লিঙ্গ স্বীকৃতি ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে মাথা ঘামাতে চান না তিনি। এর জন্য অস্ত্রোপচার সহ সুদীর্ঘ চিকিৎসার প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়া, ডাক্তারের নামধাম এবং খরচা বিষয়ে তথ্যের উৎস বলতে তাঁর একমাত্র ভরসা গুগল ও হোয়াটসঅ্যাপের বিভিন্ন গ্রুপ।
একবার মুম্বইয়ের একটি সরকারি হাসপাতালে তিনি গিয়েছিলেন বটে, তবে দ্বিতীয়বার আর ওমুখো হননি আরুষ। তাঁর কথায়: “সাহায্য করার বদলে ডাক্তারবাবু আমায় বোঝাতে লাগলেন, আমি যেন ওই সার্জারিটা না করাই। উনি বুঝতেই চাইছিলেন না কিছু। মা-বাবাকে ফোন করে অনুমতি নিতেও বলেছিলেন। মাথাটা ভয়ানক গরম হয়ে গেল আমার। একেই এরকম একটা প্যাঁচে পড়েছি, তার উপর উনি জটিলতা বাড়ানো বাদে আর কিচ্ছুটি করলেন না।”
আপাতত একটা বেসরকারি হাসপাতালেই চিকিৎসা করাচ্ছেন আরুষ। কাউন্সিলিং করিয়ে দেখা গেছে যে তিনি আদতে জেন্ডার ডিসফোরিয়ার শিকার — জৈবিক লিঙ্গ ও লৈঙ্গিক পরিচয় এক না হওয়ায় যে কষ্ট, উদ্বেগ ও অস্বস্তির সৃষ্টি হয়। চিকিৎসকেরা তাঁকে হরমোন থেরাপি শুরু করার অনুমতিও দিয়েছেন। তবে লৈঙ্গিক রূপান্তরের প্রক্রিয়াটি যতটা দীর্ঘ, ঠিক ততটাই ব্যয়বহুল।
২১ দিন অন্তর টেস্টোস্টেরন ইঞ্জেকশন নিতে হয় আরুষকে, ইঞ্জেকশনের একেকটা কিটের দাম ৪২০ টাকা, আর সেটা দিতে ৩৫০ টাকা করে নেন ডাক্তার। এছাড়াও দু সপ্তাহে একবার খাবার ওষুধ আছে, তার দাম ২০০ টাকা। হরমোন থেরাপির কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা সেটা বোঝার জন্য ২-৩ মাসের ফারাকে বিভিন্ন রক্ত পরীক্ষা করাতে হয়, তাতে প্রায় ৫,০০০ টাকা বেরিয়ে যায়। উপরন্তু কাউন্সিলর আর ডাক্তারের দক্ষিণা রয়েছে, ভিজিট-পিছু প্রথমজন ১,৫০০ আর দ্বিতীয়জন ৮০০-১,০০০ টাকা নেন।
অবশ্য, ইতিমধ্যেই থেরাপির ফল মিলছে। আরুষের কথায়, “ভিতর ভিতর যে পরিবর্তন হচ্ছে, তা অনুভব করতে পাচ্ছি। কণ্ঠস্বরটা ভারি হয়ে গেছে। খুব আনন্দ হচ্ছে। তবে ওষুধপত্রের যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে, সেটাও জানা গেল তাঁর কাছে: “মাঝেমধ্যে কেমন যেন বিরক্তি লাগে, থেকে থেকে মেজাজ হারিয়ে ফেলি।”
আরুষের আশঙ্কা, বিধি হয়তো তাঁর সঙ্গে পালিয়ে আসার জন্য আফসোস করবেন কিংবা তাঁর প্রতি ভালো লাগাটা শেষ হয়ে যাবে। “ও অনেক উঁচুঘরের [উঁচু জাতের] মেয়ে। কিন্তু আমি যে নিচু জাতের, এটা কক্ষনো বুঝতে দেয় না। সংসারটা চালাতে ও কামকাজও শুরু করেছে,” আরুষ বললেন।
আরুষের হাবভাবে, আচার-আচরণে যে পরিবর্তন এসেছে, সেটা বিধিও লক্ষ্য করেছেন। তাঁর কথায়: “বারকতক ঝগড়া-টগড়া হয়েছে ঠিকই, তবে আমরা মাথা ঠান্ডা করে বসে আলাপ-আলোচনাও করেছি। হ্যাঁ, এসবের জন্য আমার উপরেও চাপ পড়ছে, কিন্তু ওকে ছেড়ে আমি কোত্থাও যাব না।” ইচ্ছে ছিল কম্পিউটার বা নার্সিং নিয়ে বৃত্তিমূলক কোর্স করবেন, কিন্তু সে স্বপ্ন আপাতত স্থগিত রেখে যা কাজ পাচ্ছেন করছেন সংসারের তাগিদে। দক্ষিণ ভারতীয় একটি রেস্তোরাঁয় বাসন মেজে মাসে ১০,০০০ টাকা পান, যেটার খানিকটা আরুষের চিকিৎসায় কাজে লাগে।
একটি বিল্ডিংয়ে পাহারাদারের কাজ করে মাস গেলে ১১,০০০ টাকা পান আরুষ, সেটার থেকে অল্প অল্প করে জমিয়ে রাখছেন। তাঁর সহকর্মীদের চোখে তিনি পুরুষ-ই। বুক চেপে রাখতে একটি বাইন্ডার পরে থাকেন আরুষ, বড্ড যন্ত্রণাদায়ক এই বন্ধনীটি।
“কাজের জন্য সক্কাল সক্কাল বেরিয়ে যেতে হয় দুজনকেই, তাই পরস্পরের সঙ্গে খুব একটা সময় কাটাতে পারি না। কাজ থেকে ফিরে দুজনেই হাঁফিয়ে উঠি, খিটিমিটি লেগেই থাকে,” জানালেন বিধি।
২০২২ সালে, সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মাঝে আরুষের চিকিৎসায় প্রায় ২৫,০০০ টাকা বেরিয়ে গেছে। হরমোন থেরাপি শেষ হলে লিঙ্গ স্বীকৃতির সার্জারি (সেক্স রিঅ্যাসাইনমেন্ট সার্জারি বা এসআরএস নামেও পরিচিত) করাতে চান আরুষ। বুক ও যৌনাঙ্গে অস্ত্রোপচার মিলিয়ে মোট খরচা হবে ৫-৮ লাখ টাকা। বর্তমানে এই তাঁরা যৌথভাবে যতটুকু রোজগার করেন, তার থেকে এ অপারেশনের খরচ মেটানো অসম্ভব।
অস্ত্রোপচার না হওয়া অবধি চিকিৎসার কথা বাড়িতে জানাতে চান না আরুষ। চুলগুলো ছোটো করে কেটে ফেলার পর না জানি তাঁর মা কোথা থেকে জানতে পেরে যান, তখন ফোন করে বিশাল ঝামেলা করেছিলেন আরুষের সঙ্গে। “আই ভেবেছিল, মুম্বইয়ের লোক বুঝি আমার মাথায় ভুলভাল চিন্তাভাবনা ঢুকিয়ে দিচ্ছে,” বললেন তিনি। একবার তো ছেলেকে ভুলিয়ে ফুসলিয়ে গাঁয়ের কাছে এক তান্ত্রিকের ডেরাতেও নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর আই। “সে ব্যাটা আমায় পেটাতে শুরু করল, মাথা ঠুকে দিচ্ছে, আর ফাটা রেকর্ডের মতো বকেই চলেছে, ‘তুই একটা মেয়ে, তুই ছেলে নোস’।” আতঙ্কে অস্থির হয়ে গিয়েছিলেন আরুষ, কোনওমতে দৌড়ে পালিয়ে বাঁচেন সে যাত্রা।
*****
“সেই সরকারি ডাক্তারটি ভালো মানুষ হলে এমন গাঁটকাটা চিকিৎসার দ্বারস্থ হতাম না,” স্বীকার করলেন আরুষ। রূপান্তরকামী মানুষ (অধিকার রক্ষা) আইন, ২০১৯ অনুযায়ী লিঙ্গ স্বীকৃতি সার্জারি ও হরমোনাল থেরাপি চলাকালীন এবং তা শেষ হয়ে যাওয়ার পর কাউন্সিলিং সহ যাবতীয় চিকিৎসা পরিকাঠামো প্রদান করার দ্বায়িত্ব সরকারের উপর বর্তায়। খরচাপাতি সামলানোর জন্য স্বাস্থ্য বিমা যোজনার কথাও বলা আছে উক্ত আইনে। এছাড়াও চিকিৎসা এবং সার্জারির উপর আরুষের যে মৌলিক অধিকার রয়েছে, এটাও নিশ্চিত হওয়ার কথা এই আইনটির দ্বারা।
আইনটি জারি হওয়ার পর থেকে, ২০২২ সালে রূপান্তরকামী মানুষদের জন্য কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও কল্যাণ মন্ত্রক একাধিক কল্যাণ যোজনা চালু করেছে। রূপান্তরকামী মানুষদের জন্য ২০২০ সালে যাত্রা শুরু করেছিল একটি জাতীয় পোর্টাল , যেটির দ্বারা তাঁরা কোনও অফিসের চৌকাঠ না ডিঙিয়েই পরিচয়পত্র তথা পরিচয়ের শংসাপত্র হাসিল করতে পারেন।
আরুষ এই সকল যোজনার অধিকাংশের ব্যাপারেই অবগত নন বটে, তবে পরিচয় সংক্রান্ত নথির জন্য আবেদন করে ফেলেছেন ইতিমধ্যেই। “আবেদন জমা পড়ার ৩০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসন রূপান্তরকামী শংসাপত্র এবং পরিচয়পত্র সরবরাহ করতে বাধ্য” — উপরোক্ত পোর্টালে একথা লেখা থাকলেও আজ অবধি সেসবের কিছুই পাননি আরুষ। ২রা জানুয়ারি, ২০২৩ অবধি উক্ত নথির জন্য ২,০৮০টি আবেদন জমা পড়েছে মহারাষ্ট্রে, যার মধ্যে থেকে ৪৫২টির রফা আজও হয়নি।
আরুষ এই আতঙ্কে ভোগেন যে পরিচয় শংসাপত্র না থাকায় বিএ ডিগ্রিটিও আরুষির নামেই ছাপা হবে, যার ফলে এন্তার কাটখড় পুড়িয়ে কলম পিষতে হবে অনেকদিন ধরে। পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন তাঁর আজও অটুট, তবে হ্যাঁ, লিঙ্গ স্বীকৃতির সার্জারির পর পুরুষ রূপেই তা করতে চান আরুষ। ভারতের ইতিহাসে প্রথম কোনও রূপান্তরকামী পুরুষ রাজ্য পুলিশে স্থান পেয়েছেন — বিহার থেকে এই খবরটা পাওয়ার পর আশার আলো দেখতে পেয়েছেন তিনি। “এটা জানার পর থেকে খুব ভালো লাগছে। ভিতর ভিতর আশা জন্ম নিয়েছে,” বলছেন আরুষ। আপাতত হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর অস্ত্রোপচারের জন্য মাস-মাইনে থেকে খানিকটা করে সঞ্চয় করছেন তিনি।
মানুষ যদি অপরকে গ্রহণ করতে শিখত, বড্ড ভালো হত — এই খোয়াব দেখেন আরুষ। তাহলে এভাবে ভিটেমাটি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হত না কাউকে। তাঁর বক্তব্য: “প্রচুর কেঁদেছি, বেঁচে থাকতেই আর ইচ্ছে করত না। এভাবে ভয়ে ভয়ে বাঁচতে হবে কেন? আশা করি, একদিন নাম গোপন না করেই আমরা আমাদের দাস্তান শোনাতে পারব।”
বিধির সহাস্য উত্তর, “মুঘল-এ-আজমের শেষটা বড্ড দুঃখের ছিল। আমাদের শেষটা মোটেই ওরকম হবে না।”
পরিচয় গোপন রাখতে বিধি ও আরুষের নাম বদলে দেওয়া হয়েছে।
অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)