১১ই অগস্ট, পানামিকের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কোভিড-১৯ টিকার জন্য অপেক্ষা করছিলেন জনা শয়েক মানুষ। ভারতবর্ষ জুড়ে কোটি কোটি লোক ঠিক যেভাবে অপেক্ষা করছে, তাই তো? না, ঠিক তেমনটা নয়। লেহ'র পানামিক ব্লকের সবচাইতে উঁচু স্থানটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৯,০৯১ ফুট উপরে অবস্থিত। এই একই নামে একটা গ্রামও আছে বটে, তবে সেটার উচ্চতা অবশ্য কয়েক হাজার ফুট কম। তবুও, ১১,০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই প্রাইমারি হেল্থ সেন্টারটি (পিএইচসি) পৃথিবীর সর্বাধিক উচ্চতায় অবস্থিত টিকাকেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম।
কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখের প্রতিটা প্রান্তে কোভিড-১৯এর টিকা এনে মজুত করাটাই বিরাট ঝকমারির কাজ। তাছাড়া যাঁরা প্রত্যন্ত সব জনপদে থাকেন, তাঁদের পক্ষে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে টিকাকেন্দ্রে এসে পৌঁছনোটা মুখের কথা নয় মোটেও।
তবে শুধুমাত্র উচ্চতাটাই যে বিস্ময়কর তা নয়, এই কেন্দ্রের মনোভাবটিও দেখার মতো। লেহ'র সিয়াচেন হিমবাহের কোল ঘেঁষে থাকা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির আরেকটি বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। না আছে ঠিকঠাক ইন্টারনেট পরিষেবা, অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থাও তথৈবচ, তবুও সব প্রতিকূলতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এখানে সেনাবাহিনীর ২৫০ জন জওয়ানের দৈনিক টিকাকরণ চলছিল। লাদাখ জুড়ে পানামিক তথা আরও বেশ কয়েকটি টিকাকেন্দ্র হাজার একটা প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলা করে বেশ নিপুণভাবেই প্রতিনিয়ত নিজেদের কাজ করে চলেছে।
একে তো লেহ থেকে ১৪০ কিমি দূর, তার উপর ইন্টারনেট সংযোগ এমন বেহাল, তা সত্ত্বেও তাঁরা এমন সুষ্ঠুভাবে কাজ করছেন কেমন করে? এখানকার শীতাতপ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ যিনি করেন, সেই সেরিং আঞ্চোকের কথা শুনে অবশ্য মনে হল যেন ব্যাপারখানা তেমন কিছুই নয়: "এ আর এমন কী? শুধু একটুখানি ধৈর্য ধরতে হয়, এই যা। ঘন্টার পর ঘন্টা কাজ করে যাই, খেয়াল রাখি যাতে কোনও ভুলচুক না হয়।" অর্থাৎ দেশের অন্যান্য প্রান্তে যে কাজটা করতে কয়েক মিনিট লাগে, ঠিকঠাক ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার ফলে সেটার পিছনেই ঘন্টার পর ঘন্টা বেরিয়ে যায় এখানে। অথচ আসল কাজ, অর্থাৎ টিকা দিতে এই দীর্ঘ সময়ের ভগ্নাংশ মাত্রই ব্যয় হয়।

"আমার ছবি টবি তুলবেন না যেন," জানালো বছর আটেকের ছোট্ট জিগমাৎ জোরফাল, তার মা স্ট্যানজিন্ দোলমা পানামিকের এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র কর্মরত একজন ফার্মেসিস্ট। টিকাকরণের সময় হামেশাই জিগমাৎ ওর মায়ের পিছু পিছু চলে আসে এখানে
এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ফার্মেসিস্টের কাজ করেন স্ট্যানজিন্ দোলমা। ইনি যে শুধু ঘন্টার পর ঘন্টা পরিশ্রম করেন তা নয়, পাশাপাশি নিজের ৮ বছরের ছেলেটাকেও চোখে চোখে রাখতে হয় সারাক্ষণ। "আমার ছেলেটা মাকে ছাড়া বেশিক্ষণ থাকতেই পারে না, তাই যেদিনগুলো আমাকে অতিরিক্ত সময় কাজে দিতে হয় [বিশেষ করে টিকাকরণের নির্দিষ্ট দিনে] সেদিনগুলোয় ওকে সঙ্গে নিয়ে আসি। ছেলেটা সারাদিন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই থাকে। একেকদিন তো রাতেও কাজ করতে হয়, ও তখনও পিছু ছাড়ে না আমার।"
বাচ্চাদের পক্ষে এভাবে সারাটা সময় এখানে ঘুরঘুর করাটা বিশাল ঝুঁকির, এটা যে তিনি জানেন না এমনটা মোটেও নয়, তবে তাঁর চেয়ে ভালো কে-ই বা জানে যে ছেলের দেখভাল করতে গেলে এছাড়া আর উপায় নেই। "অসুস্থ মানুষজন আর আমার ছোট্টো সোনাটা – দুজনেই আমার কাছে সমান দামি," জানালেন তিনি।
এখানে কর্মরত ডাক্তার চাবুংবাম মেইরাবা মৈতৈ আদতে মণিপুরের মানুষ, তিনি বলছিলেন, "গোড়ার দিকে তো তাণ্ডব চলছিল পুরো। একে তো এমন দূর্বল পরিকাঠামো, তার উপর যোগাযোগ ব্যবস্থার এই ছিরি, নাজেহাল হয়ে যাচ্ছিলাম আমরা সবাই। তবে ধীরে ধীরে ব্যাপারটা যেমন আয়ত্তে এনেছি, তেমনই টিকা নেওয়াটা যে কতটা জরুরি সেটা গ্রামবাসীদের গিয়ে গিয়ে বোঝাতে পেরেছি ভালোমতো।"
ভারতের অন্যান্য জায়গার মতো কোভিডের 'দ্বিতীয় তরঙ্গে' তছনছ হয়ে গিয়েছিল লাদাখও। গাড়িঘোড়ার নিরন্তর চলাচল, মরসুমি শ্রমিকদের আগমন এবং কেন্দ্রশাসিত এই অঞ্চলটির বাইরে পড়াশোনা কিংবা কাজ করতে বাইরে যাওয়া মানুষের লেহ শহরে ফিরে আসা - হুহু করে বাড়তে থাকা সংক্রমণের পিছনে ছিল এই কারণগুলি।
"এমন ভয়ানক বিটকেল সময় দেখিনি আগে কোনওদিন," অতিমারির গোড়ার দিকের কথা বলছিলেন লেহ'র জেলা টিকাকরণ আধিকারিক তাশি নামগিয়েল, "এত লোককে পরীক্ষা করার মতো কোনও ব্যবস্থাই ছিল না লেহ শহরে। দিনের পর দিন তীর্থের কাক হয়ে বসে থাকতাম পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য। তবে সেসব দিন আর নেই, অনেকটাই উন্নতি হয়েছে, লেহ'র সোনাম নুর্বু স্মারক হাসপাতালে এখন দৈনিক ১,০০০ জনের পরীক্ষা করতে পারি আমরা। এবছরটা শুরু হতে না হতেই আমরা ঠিক করে নিয়েছিলাম যে অক্টোবরের শেষে শীত পড়ার আগেই সব্বাইকে টিকা দিয়ে দেব।"
স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে না রয়েছে নিয়মিত ইন্টারনেট পরিষেবা, না আছে সাধারণ মানুষের হাতে যোগাযোগ ব্যবস্থার কোনও ভরসাযোগ্য প্রযুক্তি, ফলত তাঁরা মাথা খাটিয়ে নানান ফন্দি আঁটতে বাধ্য হয়েছেন যাতে টিকাকরণের কাজটা ঠিকমতো সম্পন্ন করা যায়। "বয়স্ক মানুষজন কেউই স্মার্টফোন ব্যবহার করেন না। তাছাড়া ইন্টারনেট সংযোগ এখানে এই আছে তো এই নেই," জানালেন স্বাস্থ্যকর্মী কুনজাং চোরোল, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯,৭৯৯ ফুট উঁচুতে অবস্থিত লেহ জেলার খাল্ৎসে গ্রামে থাকেন তিনি। যোগাযোগ ব্যবস্থার এমন হযবরল মার্কা অবস্থা হওয়া সত্ত্বেও টিকাকরণের কাজ তাহলে সামলালেন কেমন করে তাঁরা?

খাল্ৎসে গ্রামে রোগীদের যাবতীয় তথ্য কোউইন অ্যাপে নথিভুক্ত করছেন কুনজাং চোরোল, ইনি খালসি তহসিলের একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত একজন ফিজিওথেরাপিস্ট
এখানকার মানুষজন কুনজাংকে 'কুনেই' নামে চেনেন, তিনি বললেন: "প্রথম ডোজ দেওয়ার পর আমরা সেটার একক সংখ্যা (ইউনিক নাম্বার) আর দ্বিতীয় ডোজের তারিখ একটা কাগজে লিখে রাখতাম। সবার হাতেই তো পরিচয়পত্র জাতীয় কিছু না কিছু থাকত, যেমন ধরুন আধার কার্ড, আমরা সেটার পিছনে টিকার ওই ক্রম আর তারিখ লেখা চিরকুটগুলো সেঁটে দিতাম। এভাবেই বুদ্ধি করে কাজকম্ম সামলেছি। হলফ করে বলতে পারি যে গ্রামবাসীদের জন্য এই উপায়টা দারুণ কাজ করেছে।"
"তারপর টিকার দুটো ডোজ হয়ে গেলে আমরা সেটার সার্টিফিকেটগুলো ছাপিয়ে রোগীদের হাতে হাতে দিয়ে দিতাম," জানালেন তিনি।
যে সময়টায় করোনার সঙ্গে লড়তে গিয়ে দেশজোড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্র আর হাসপাতালগুলোর নাভিশ্বাস উঠেছিল, আমি আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম এটা দেখে যে ফিয়াং গ্রামের একটা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তখন করোনার টিকাকরণের পাশাপাশি শিশুদের অন্যান্য সমস্ত রোগজ্বালার টিকাগুলোও দেওয়া হচ্ছিল কোনও রকমের ঝামেলা ছাড়াই। ফিয়াংয়ের উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২,০০০ ফুট।
তবে এই যে কেন্দ্রশাসিত লাদাখ অঞ্চলের প্রশাসন দাবি করেছে যে এখানকার মানুষজনের মধ্যে যাঁদের যাঁদের টিকা নেওয়ার বয়স হয়েছে তাঁদের প্রত্যেককেই করোনার প্রথম ডোজের টিকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে – এটা হয়তো পুরোপুরি সত্যি নয় । তবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দিনের পর দিন বিপজ্জনক পাহাড়ি পথ বেয়ে যাতায়াত করে এখানকার স্বাস্থ্যকর্মীরা যে দুঃসাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, সেটাকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। হাড়কাঁপানো হিম আর বীভৎস শুষ্কতার সঙ্গে ঘর করেন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮,০০০-২০,০০০ ফুট উচ্চতায় বসবাস করা লাদাখের ২৭০,০০০ জন মানুষ, তাঁদের কাছে টিকা পৌঁছে দিতে গিয়ে দাঁতে দাঁতে চেপে দিনরাত যুদ্ধ করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।
লেহ অঞ্চলে কোভিড তথা অন্যান্য টিকার শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের মুখ্য দ্বায়িত্বে রয়েছেন জিগমেৎ নামগিয়েল, তিনি বলছিলেন: "মারাত্মক সব সমস্যার মোকাবিলা করেছি আমরা। কোউইনের কথাই ধরুন না, ব্যবহারের অযোগ্য অ্যাপ একটা। এছাড়াও পানামিকের মতো আরও অন্যান্য সমস্ত দুর্গম জায়গায় যে যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো আছে, সেখানে নিয়মিত ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়াই যায় না।" টিকাগুলি প্রয়োজনীয় তাপমাত্রায় রাখা হচ্ছে কিনা, এবং বিভিন্ন গুদামে সেই অঞ্চলের চাহিদামতন টিকা মজুত করা আছে কিনা, এসব তদারকি করতে তুন্দ্রাচ্ছন্ন মরুপ্রান্তর পেরিয়ে নামগিয়েল হামেশাই ৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ পাড়ি দেন।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২,০০০ ফুট উঁচুতে ফিয়াং গ্রাম, এখানকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডাক্তাররা করোনার টিকার পাশাপাশি শিশুদের অন্যান্য সমস্ত রোগজ্বালার টিকা দিচ্ছেন নিয়মিত
"আহাহা, শুধু কোউইন নয়, টিকা নষ্ট হচ্ছে কিনা সেটার উপর নজর রাখাটাও বেশ ঝকমারির কাজ," জানালেন খালসি তহসিলের একটি পিএইচসিতে কর্মরত দিয়াচেন আংমো। "কেন্দ্র সরকারের কড়া নির্দেশ আছে, একটাও টিকা নষ্ট করা চলবে না।"
আংমো বেশ যুত করে বোঝালেন যে এই কাজটা কতটা "কঠিন। এক একটা ভায়াল থেকে দশখানা টিকা দেওয়া যায়। কিন্তু গণ্ডগোলটা কোথায় জানেন? ভায়ালগুলো খোলার ঘন্টা চারেকের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। দিনে চার ঘন্টা ধরে টিকা দেওয়া হয় বটে, তবে এক একদিন দেখা যায় যে মোটে জনা চারেক লোক এসেছে। আসলে আমাদের এখানকার গ্রামগুলো সমস্ত প্রত্যন্ত জায়গায় তো, যেমন ধরুন খাল্ৎসে, মানুষজন খুব কষ্ট করে পাহাড়-পর্বত ডিঙিয়ে আসে। তাই টিকাগুলো নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। এটা আটকাতে আমি বা আমার সহকর্মীরা একদিন আগে থাকতেই গ্রামে গ্রামে ঘুরে লোকজনকে বোঝাই, যাতে তারা দল বেঁধে সময়মতো স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চলে আসে। বিশাল খাটাখাটনি, তবে হ্যাঁ, বুদ্ধিটা কাজে দিয়েছে বটে। তাই আমাদের এখানে একটাও টিকা জলে যায়নি।"
পরে জানতে পেরেছিলাম যে এসব পাহাড় টাহাড় ডিঙোনো তো নস্যি, এই তহসিলে লিংশেৎ নামে একটা গ্রাম আছে, মারাত্মক দুর্গম জায়গায়, আকাশপথে সেখানে টিকা নিয়ে গিয়েছিলেন খালসির স্বাস্থ্যকর্মীরা। সেদিন টিকাকরণের দ্বায়িত্বে থাকা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ পদ্মা জানালেন: "প্রথমটায় গ্রামবাসীরা টিকা নিতে কিন্তু-কিন্তু করছিলেন, তবে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে বোঝাচ্ছি তাঁদের। টিকাগুলো যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা আস্তে আস্তে এখন সবাই বুঝতে পারছেন। একদিনে ৫০০ জনকে টিকা দেওয়ার রেকর্ড আছে আমাদের। আর এই অসাধ্য সাধন আমরা সবাই দলবেঁধেই করেছি।"
"আমি তো হতবাক," বলছিলেন জিগমেৎ নামগিয়েল, "নার্স, ফার্মেসিস্ট, ডাক্তার, সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যেভাবে সমস্ত বাধা-বিপত্তি পার করে টিকাকরণে সফল হয়েছেন সেটা সত্যিই আশ্চর্যজনক। এখন শুধু যে লাদাখের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মানুষজনকে টিকা দিচ্ছি তা নয়, এমনকি যারা যারা মরসুমি মজুর, নেপাল থেকে আগত শ্রমিক কিংবা ধরুন অন্যান্য রাজ্য থেকে যেসব পর্যটকেরা টিকা ফিকা কিছু না নিয়েই ড্যাং ড্যাং করে এখানে ঘুরতে চলে আসছে, সব্বাইকে ধরে ধরে টিকা দেওয়া হচ্ছে।"
এই বক্তব্যে কিন্তু একটি ফোঁটাও জল মেশানো নেই। ঝাড়খণ্ড থেকে আগত কয়েকজন মরসুমি শ্রমিকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল আমার, তাঁরা পানামিকের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কাছেই একটা রাস্তা বানাচ্ছিলেন। "কপালজোরে লাদাখে এসেছি বটে," বলছিলেন ওঁরা, "আমাদের সবাইকেই টিকার প্রথম ডোজটা দিয়েছেন এনারা। এখন দ্বিতীয় ডোজটার জন্য অপেক্ষা করছি আর কি। বাড়ি ফিরতে ঢের দেরি আছে, ততদিনে টিকাগুলো শিরায় শিরায় ছড়িয়ে পড়বে, কোভিড আমাদের টিকিটিও ছুঁতে পারবে না। তাছাড়া আমাদের থেকে বাড়ির লোকজনের করোনা হওয়ার ভয়টাও থাকবে না আর।"

পানামিকের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ইন্টারনেট পরিষেবা বে হাল, তাই ছাদে উঠে নিজের ইন্টারনেট সংযোগ পরীক্ষা করছেন একজন স্বাস্থ্যকর্মী

লেহ থেকে আনুমানিক ১৪০ কিমি দূরে অবস্থিত পানামিক পিএইচসিতে অপেক্ষারত জনা শয়েক গ্রামবাসী। সিয়াচেন হিমবাহের কাছেই স্থিত এই ব্লকটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৯,০৯১ ফুট উঁচু

পানামিক পিএইচসিতে টিকাকরণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফার্মেসিস্ট স্ট্যানজিং দোলমা

পানামিক পিএইচসিতে কত টিকা মজুত রয়েছে সেটা খতিয়ে দেখছেন সেরিং আঞ্চোক। এই কাজটি কোউইন অ্যাপটির মাধ্যমে ডিজিটালি করা গেলেও অনেক সময় সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না, ফলত স্বাস্থ্যকর্মীরা বাধ্য হন দু'বার করে মেলাতে

শঙ্কিত এক গ্রামবাসীকে টিকার ব্যাপারে আশ্বস্ত করছেন পানামিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী সেওয়াং দোলমা

ঘুসঘুসে জ্বর নিয়ে পানামিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছেন একজন বৌদ্ধ লামা, তাঁকে পরীক্ষা করে দেখছেন ডাঃ চাবুঙবাম মেইরাবা মৈতৈ

শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ছো ট্টো তেনজিংয়ের জন্য নেবুলাইজারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন পানামিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একজন প্রবীণ নার্স

চাষের কাজ করার সময় দুর্ঘটনায় জখম হওয়া এক গ্রামবাসীর আঙুল সেলাই করে দিচ্ছেন ডাঃ চাবুঙবাম মেইরাবা মৈতৈ। অতিমারি চলাকালীন হাজার একটা সমস্যা মোকাবিলা করেছেন পানামিক পিএইচসির ডাক্তারেরা

"গোড়ার দিকে বেশ অসুবিধার মধ্যে পড়েছিলাম বটে, তবে আজ অবধি অসংখ্য মানুষকে টিকা দিতে সক্ষম হয়েছি আমরা," জানালেন আলি মুসা, পানামিক পিএইচসিতে কর্মরত এই ফার্মেসিস্ট আদতে তুর্তুকের মানুষ

খাল্ৎসে গ্রামের একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকাকরণ শুরু হওয়ার আগে সহকর্মী সেরিং লান্দোলকে পিপিই পোশাক পরতে সাহায্য করছেন দিয়াচেন আংমো

খাল্ৎসে পিএইচসিতে টিকাকরণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে নিজের ফোনে কিছু জরুরি তথ্য একঝলক দেখে নিচ্ছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ পদ্মা

খাল্ৎসে গ্রামের পিএইচসিতে পরবর্তী রোগীর জন্য অপেক্ষারত দিয়াচেন আংমো। টিকা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা লেগেই আছে লাদাখে, তাই স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রত্যেকেই চেষ্টা করেন যাতে ভায়ালপিছু ১০-১১টি টিকা দেওয়া যায় গ্রামবাসীদের

খাল্ৎসে গ্রামে টিকাকরণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে একটি ইস্কুলের কামরা, উৎসুক হয়ে সেখানে অপেক্ষা করছেন কয়েকজন গ্রামবাসী

খালসি তহসিলের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে টিকার দ্বিতীয় ডোজের জন্য আসা এক গ্রামবাসীকে সাহায্য করছেন একজন স্বাস্থ্যকর্মী

খাল্ৎসের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোভিড-টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিচ্ছেন লামায়ুরু এলাকার এক গ্রামবাসী

খাল্ৎসে গ্রামের একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে সযত্নে টিকা দিচ্ছেন দিয়াচেন আংমো

টিকা নেওয়ার পর সেটার শংসাপত্র হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন একজন গ্রামবাসী

"মোটেও আরামদায়ক নয় এই পোশাকটা। সারাদিন পিপিই পরে থাকাটা মহা ঝকমারির কাজ। তবে হ্যাঁ, নিদেনপক্ষে এখানকার আবহাওয়াটা ঠাণ্ডা ; সমতলের স্বাস্থ্যকর্মীরা যে কীভাবে এটা পরে কাজ করেন তা ভেবেই পাই না আমি," জানালেন খাল্ৎসে পিএইচসিতে কর্মরত সেরিং আঙচুক

সারাদিন ধরে চলা টিকাকরণের শেষে জনমানবশূন্য খাল্ৎসে পিএইচসির অস্থায়ী টিকাকেন্দ্র
অনুবাদ: জশুয়া বোধিনেত্র (শুভঙ্কর দাস)